২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
বরিশাল

রাঙ্গাবালীতে খাস খালে লবণ পানি উঠিয়ে মাছ চাষ, হুমকির মুখে ফসলি জমি

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০৩-০৪ ১৬:১০:৩২
...

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) :
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার 'খালের পানির উপর ভরসা কইরে শত শত একর জমিতে বোরো ধান, তরমুজ, আলু, পাতাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন যাতের সবজি লাগানো হয়। খালের পানি প্রথম দিকে মিষ্টি থাকলেও, ইজারাদাররা নানান কৌশলে লোনা পানি উঠিয়ে নষ্ট করে কৃষকের ফসল । সেই সঙ্গে ধ্বংস করে দ্যায় দরিদ্র কৃষকের স্বপ্ন।

কৃষকরা তাদের জমিতে আমন চাষের পর বোরো আবাদ করে। তাদের জমির পাশে কাসেমখার ডোস বদ্ধ খাল নামের খালটিতে মিষ্টিপানি থাকে। খালটি ইজারা দিলে ইজারাদাররা নোনাপানি উঠিয়ে মাছ চাষ করেন। যে কারণে ওই খালের আশপাশে প্রায় ২০০০ একর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
শুধু ওই খালটি নয়। রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এমন শতাধিক বদ্ধ খাল মাছ চাষিদের কাছে প্রতি তিন বছর পর পর ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার চুক্তি অনুযায়ী এসব খালে নোনাপানি ওঠানো নিষেধ। কিন্তু ইজারাগ্রহীতারা গোপনে স্লুইস গেটের কপাট খুলে নোনাপানি উত্তোলন করেন। ফলে ওইসব খালের পানির ভরসায় যেসব কৃষক শুস্ক মৌসুমে বোরো আবাদের চেষ্টা করেন, তাঁরা প্রতি বছর লোকসান গুনছেন। দীর্ঘদিন ধরে ধান চাষের স্বার্থে এসব খাল ইজারা না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা।

উপজেলার উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের বোরো চাষি শাজাহান গাজী জানান, বিলের মধ্যে ছোট-বড় অনেক খাল রয়েছে। এসব খাল বর্ষা মৌসুমে মিষ্টি পানিতে ভরা থাকে। শুস্ক মৌসুমে খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা গেলে স্থানীয় বোরো চাষিরা লাভবান হতেন। কিন্তু শুস্ক মৌসুমে এসে ইজারাদাররা গোপনে খালে নোনাপানি তোলেন। ফলে এসব খালের পানি তখন আর সেচকাজে ব্যবহার সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে কৃষকরা অনেক দূর থেকে পুকুর-ডোবার পানি দিয়ে সেচকাজ চালান। অনেকেই বৃষ্টির ওপর ভরসা করে বসে থাকেন।

একই গ্রামের কৃষক ফিরুজ খান বলেন, বাড়ির পাশে কাসেমখার ডোস বদ্ধ খালে সারা বছর নোনাপানির মাছ চাষ চলে। অথচ ওই খালে নোনাপানি তোলার কথা নয়। খালটিতে মিষ্টিপানি থাকলে এর দুই পাশে কয়েকশ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ, তরমুজ চাস ও আলু চাষ সম্ভব হতো।
মধ্য -চরমোন্তাজ গ্রামের কৃষক শাজাহান গাজী বলেন, গভীর-অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকায় সে পানি সেচকাজে ব্যবহার করা যায় না। এ জন্য তাঁরা বোরো চাষিরা স্থানীয় খাল ও পুকুর-ডোবার পানির ওপর ভরসা করে চাষাবাদ করেন। কিন্তু খালগুলো ইজারা দেওয়ায় সেখানে নোনাপানির মাছ চাষ হয় বেশি। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী জমিতে সেচ দিতে পারেন না। খালগুলো উন্মুক্ত থাকলে এলাকায় বোরো আবাদ আরও বাড়ত বলে জানান তিনি।

কৃষকরা বলেন গত এক বছর খালটি ইজারা দেওয়া হয়নি, এতে খালের দু পাড়ে শতাধিক কৃষক খালের পানি ব্যবহার করে বোরো ধান, তরমুজ ও আলু চাষ করে লাভবান হয়েছে । সরকারের কাছে আমাদের দাবি যাতে এই খালটির ইযারা বাতিল করা হয় এতে এই অঞ্চলের ব্যাপক কৃষক লাভবান হবে ।

রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডঃ মোঃ জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু প্রভাবশালী কচুকরি মহল এই খাঁলটি অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ভোগ করে আসছিল গত বছর কৃষকের সুবিধার্থে আমি খালটি কেটে দিয়েছি এ বছরও তারা ভোগ করার পাঁয়তারা করে আসছে স্থানীয় কৃষকরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আমি এ বিষয়টি মাসিক মিটিংয়ে উপস্থাপন করব যাতে খালটি ইজারা না দেওয়া হয় ।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে অনেক কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে আসেন। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু খাল ইজারার বিষয়ে উপজেলায় জেলায় আলাদা কমিটি আছে, তারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সেচের বিষয়টি উপজেলা জলমহাল কমিটির কাছে তুলে ধরবো, যাতে কৃষকরা নির্বিঘ্নে খালের পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে পারেন।

উপজেলা জলমহাল কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গাবালীর ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয়ভাবে রাজস্ব আয়ের স্বার্থে খাল ও জলাশয় ইজারা দেওয়া হয়। এর নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, সেখানে কোনোভাবে নোনাপানি তোলা যাবে না। কেউ যদি গোপনে নোনাপানি তুলে কৃষকের ক্ষতি করে থাকে, তাহলে অভিযোগ পেলে তার ইজারা বাতিল করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।