কিশোর অপরাধ ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব থানায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাটে কিশোরদের দেখা গেলে আটক করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যার পর বা চায়ের স্টলে কিশোরদের দেখা মাত্রই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতা করলেও তাদের আটকের জন্য বলা হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করবে।
পুলিশ বলছে, কিশোরদের থাকার কথা পড়ার টেবিলে। কিন্তু দিনে তো বটেই, সন্ধ্যার পরও তারা রাস্তায় থাকছে, বাইরে থাকছে। ধীরে ধরে তারাই জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে। কেউ হয়ে উঠছে ছিনতাইকারী, কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবনে, ধর্ষণের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। এমনকি গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং। এ পরিস্থিতিতে কিশোরদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বলেন, কোনো কিশোর সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে থাকতে পারবে না। এই সময়ে তার ঘরের বাইরে থাকার কোনো যৌক্তিক কারণও নেই। এসময় তার পড়ার টেবিলে থাকার কথা। না হলেও ঘরে থাকবে।
তিনি বলেন, বাইরে আড্ডা দিতে দিতেই নানা ধরনের অপরাধীদের সংশ্রবে আসছে কিশোররা। অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এরকম বহু উদাহরণ আছে যে তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। ইভটিজিং করছে, সংঘবদ্ধচক্র হয়ে উঠছে। এভাবে ছোট ছোট অপরাধে জড়িত হতে হতে এক সময় ভয়ঙ্কর অপরাধীর তালিকায় নাম লেখাচ্ছে কিশোররা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, একটা সময় গিয়ে কিশোররাই ছিনতাই, চুরি, মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ ধরে তাদের জেলে পাঠাচ্ছে। জেলখানায় তারা অন্যান্য অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরো বড় অপরাধের পরিকল্পনা করছে। কোনো অপরাধে গ্রেপ্তার হলে জামিনে বেরিয়ে আরো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব কারণেই কিশোর অপরাধ ঠেকাতে এখনই অভিযান জরুরি বলে মনে করছি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিশোর অপরাধীদের ধরতে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আমরা শিগগিরই অভিযান শুরু করব। রাজধানীর কোনো সড়কের মোড়ে, পাড়া মহল্লায় সন্ধ্যার পর কোনো কিশোর আড্ডা দিতে পারবে না। যারাই আড্ডা দেবে, তাদের পাকড়াও করা হবে। আমরা চাই, সন্ধ্যার পর বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা না দিয়ে তারা পড়ার টেবিলে থাকুক। বাসায় পরিবারের সাথে থাকুক। আমরা কাউকেই ছাড় দেবো না। সবাইকে ধরে আনা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আপাতত সন্ধ্যার পর আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে থাকা কিশোরদের সবাইকে আটক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেউ নিরাপরাধ হলে পরিবার এসে মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাবে। মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আবারো পাওয়া গেলে তখন আর ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলবো সন্তানকে ঘরে রাখুন। তারা যেন বাইরে অযথা আড্ডা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা মহানগরে কিশোর অপরাধী কেউ থাকতে পারবে না। আমরা কাজ করছি। অপরাধী যেই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এতে বড় অভিযান পরিচালার প্রয়োজন হলে সেটিও করব।
ডিবি প্রধান বলেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা রয়েছে কিশোর অপরাধী থেকেই ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠে। চুরি-ছিনতাইয়ে তারাই জড়িত থাকে। মোবাইল টান দেওয়াও তারাই প্রথমে শুরু করে। তাই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পুলিশ বলছে, কিশোর অপরাধের কারণে বিভিন্ন ধরনের ছোট অপরাধের পাশাপাশি হত্যার মতো ঘটনাও কম নয়। এ কারণে কিশোর অপরাধী নিয়ন্ত্রণে এর আগে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগার বা সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ছোটখাটো অপরাধে জড়িত অনেককে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরকম কিশোরদের অনেককেও আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে।
এদিকে ডিএমপির থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ডিএমপির সদরদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে থানা পুলিশকে।
কিশোর অপরাধের অন্যতম হটস্পট কামরাঙ্গীচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। সম্প্রতি কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা নির্মূলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই মোতাবেক কাজও শুরু করেছি। প্রতিটি টহল টিমকে সন্ধ্যার পর কোন অল্পবয়সী ছেলেদের দেখলে তাদের জিজ্ঞাসা করতে বলা হয়েছে। আর সদুত্তোর না পেলে থানায় নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।
খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুকুল ইসলাম বলেন, কিশোরদের অপতৎপরতা ঠেকাতে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। সন্ধ্যার পর যেন ছেলেরা রাস্তা না থাকে কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে যেন রেস না করে সে ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন করার জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একই ধরনের তৎপরতার কথা জানিয়েছেন মিরপুর, পল্লবী ও শাহআলী থানার কর্মকর্তারা।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাং ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সদ্য যোগদান করেছি এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। থানার সকল অফিসারকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, উত্তরায় পূর্বে যে ভয়াবহ কিশোরগ্যাং ছিল তা থাকবে না। কিশোররা যেন অপরাধে না জড়াতে পারে সেজন্য অভিভাবকসহ আমরা কাজ করছি।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL