চাকরিজীবী তানভীর আহমেদ থাকেন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায়। অফিসের ব্যস্ততা আর যানজট ঠেলে বাসায় ফিরেও শান্তি পাচ্ছেন না। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু বসবেন, মশার উৎপাতে সেই সুযোগ নেই।
ঘরের মধ্যে স্প্রে ছড়িয়ে, ছুটে যান বাসার ছাদে। অন্তত ঘণ্টাখানেক সেখানেই থাকেন। অপেক্ষায় থাকেন মশা কখন মরবে। কিন্তু তানভীরের স্বস্তি ফিরে না। কারণ ওই স্প্রেতে কোনো কাজ হয় না। ফলে নিরুপায় হয়ে মশারি টানিয়েই থাকেন তিনি।
তানভীর বলেন, ‘কী বলব আর মশা নিয়ে? অনেক যন্ত্রণায় আছি। ঘরে ফিরলেই মশারির মধ্যে ঢুকতে হয়। বাইরে থাকতে পারি না।’
রাজধানী যেন রূপ নিয়েছে মশার কারখানায়। এবার অ্যাডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাড়ছে কিউলেক্স মশার প্রকোপ। এ মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
শীত ফুরিয়েছে, ফুরায়নি মশার উৎপাত। গবেষণা বলছে, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে মশার ঘনত্ব বেড়েছে চার গুণ। মশা মুক্ত করতে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে দেশের উচ্চ আদালতেরও রয়েছে নির্দেশনা। তবু মিলছে না সমাধান। বাজারে আছে নানা উপকরণ। নানা ধরনের কয়েল, জীবাণুনাশক স্প্রে, ওডোমস ব্যবহার করেও কোনো উপকার আসছে না।
ধানমন্ডিতে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুর হাসান। তিনি বলেন, ‘রাজধানী এখন মশার দখলে। মশা থেকে বাঁচতে বাজার থেকে স্প্রে, কয়েল, অ্যারোসল নিয়েছি। তবে কোনো কিছুতেই মশা তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’
তবে এসব ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসব দিয়ে মশা তাড়ালেও আমাদের স্বাস্থ্য এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে একদিকে মানহীন পণ্যে ভরে গেছে বাজার। অন্যদিকে মশা নিধনেও সিটি করপোরেশনেরও উদারসীনতা দেখা দিয়েছে।’
মগবাজারের গৃহিণী বাবলী আক্তার বলেন, ‘আরে ভাই মশার কথা কইয়েন না, দেশ এহন মশার রাইজ্য হইয়া গ্যাছে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে বাজার থেকে ব্যাট, কয়েল, অ্যারোসল নিছি। কোনোডা কাম করে না। এইডা মনে অয় নতুন মশা।’
সিটি করপোরেশন থেকে কর্মীরা এসে মশা মারার ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু রাজধানীবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের দেয়া ওষুধে কোনো কাজ হচ্ছে না।
গণমাধ্যমকর্মী রিশাদ হাসানের বক্তব্যেও দেখা গেল তারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন থেকে মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ দিতে দেখি। ফগার মেশিনে ওষুধ নাকি শুধুই ধোঁয়া এটা নিয়েও সন্দেহ আছে। এ ছাড়া সন্দেহ রয়েছে মশা নিধনে বাজারে বিক্রয় হওয়া উপকরণ নিয়ে।’
বাজারের উপকরণের ওপর বেজায় চটেছেন এই গণমাধ্যমকর্মী। তার অভিজ্ঞতা, বাজার থেকে কেনা এসব পণ্য কোনো কাজেই আসছে না।
রিশাদ বলেন, ‘এই জিনিসগুলো কি শুধু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়? এসব উপকরণ দিয়ে মশা মারা যায় না। মশা থেকে বাঁচতে কয়েল জ্বালানো হলেও মশা কয়েলের ওপরে বসে থাকে।’
রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। গুলশান, বারিধারা কিংবা বনানীতেও মশার উৎপাতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
গুলশানের বাসিন্দা রিয়াজ সবুজ বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মশার হাত থেকে বাঁচতে অ্যারোসল ও কয়েল ব্যবহার করেও মশা তাড়াতে পারছি না। এসব জিনিস খুব বেশি কাজেও আসে না। মনে হয় বাজারে মানহীন কয়েল বেড়েছে।’
ফাল্গুন মাসে বাড়ছে গরম। কর্মব্যস্ত রাজধানীর অনেকেই আসেন হাতিরঝিলে। সন্ধ্যায় একটু সুন্দর সময় উপভোগ করতে এসেছিলেন মেহরিন ও কাওসার। কিন্তু মশার উপদ্রবে সন্ধ্যাটা হয়ে গেছে যন্ত্রণাময়।
মেহরিন বলেন, ‘রাজধানীতে মশার উৎপাত বেড়েছে। ভাবছিলাম, খোলা জায়গায় হয়তো এত মশা থাকবে না। তাই একটু সময় কাটাতে এসেছিলাম। কিন্তু থাকা যাচ্ছে না।’
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL