গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা বন্ধের জরুরি নির্দেশনা জারি করতে পারে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। আইসিজে’র রায় যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যায় এবং ইসরায়েল যদি সেই রায় না মানে, তাহলে সেখানে আদালত তাদেরকে বাধ্য করতে পারবে না। কিন্তু এই ধরনের রায় রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪০০ জন। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত ৫০ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগিই বেসামরিক।
এমন অবস্থায় বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে গত ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। আজ সেই মামলারই রায় দিবে আইসিজে। দুই সপ্তাহ আগে এই মামলাটি শুরু হওয়ার পর দুই দেশই সাক্ষ্য দেয়। সেখানে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার আনা এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফিলিস্তিনিদেরকে জোরালোভাবে সমর্থন করে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়টি বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছে। যার মাঝে আছে, গাজায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ করা, যেটিকে ‘গণহত্যা’ বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই বিষয়ে কোনো রায় আসতে সময় লাগতে পারে এবং সেটি কয়েক বছরও হতে পারে।
তবে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যকে বিকৃত করেছে। তাদের দাবি, তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে; এবং তারা হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে নয়।
বিচারকদের দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ খারিজ করে দেয়ার দাবি ইসরায়েলের। তাদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগটি ‘ভয়ংকরভাবে বিকৃত’। এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। কারণ, বাস্তবে গণহত্যার কোনও অস্তিত্বই নেই।
শুক্রবার এ বিষয়ে রায় প্রদানের জন্য ১৭ জন বিচারককে দু’টো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই বিচারিক পরিষদে ১৫ জন স্থায়ী বিচারপতি আছেন। তাদের সাথে আরও আছেন ইসরায়েল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন করে প্রতিনিধি।
প্রথমত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেকশনের আওতায় পড়ে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা অব্যাহত থাকলে তা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে কিনা।
বিচারক পরিষদ ইসরায়েলকে কেবল আন্তর্জাতিক আইন মেনে কর্যক্রম চালানোর নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। সেইসাথে, তারা যেন খাবার, পানি ও ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বলতে পারে।
আন্তর্জাতিক আদালতের কেবল পরামর্শমূলক মত দেয়ার ক্ষমতা আছে। রায় আইনি প্রক্রিয়ায় দেয়া হলেও সেটি প্রয়োগে এই আদালত জোর করতে পারে না। তবে এই রায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং ইসরায়েলের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্রদের ওপরও চাপ বাড়বে। প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের তাগিদও থাকতে পারে এই রায়ে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL