২৩-নভেম্বর-২০২৪
২৩-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ময়মনসিংহ

নেত্রকোণায় ৫বালুমহালের ইজারাকার্যক্রম স্থগিত করেছে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২৮ ১৭:৩৭:২৮
...

জাহিদ হাসান, নেত্রকোণা :
নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর ৫টি বালুমহাল ইজারা সংক্রান্ত কার্যক্রম (২য় পর্যায়) স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন। এগুলো হচ্ছে বিজয়পুর ও ভবানীপুর হতে শ্নশান ঘাট পর্যন্ত ১নম্বর বালু মহাল, দুর্গাপুর শ্নশান ঘাট হতে চৈতাটি বালু মহাল, দুর্গাপুর বিরিশিরি ঘাট হতে কেরনখলা পর্যন্ত ৩নম্বর বালু মহাল, গাঁওকান্দিয়া মৌজার উত্তর সীমানা হতে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত ৪নম্বর বালু মহাল ও ঝাঞ্জাইল হতে উত্তর শংকরপুর পর্যন্ত ৫নম্বর বালু মহাল। জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ কর্তৃক বুধবার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ হতে ৫নম্বর বালুমহালের ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ৩০চৈত্র মেয়াদে ইজারা প্রদান সংক্রান্ত দরপত্র বিক্রয় ও গ্রহণের নির্ধারিত শেষ দিন ছিল যথাক্রমে গতকাল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) ও আজ বৃহস্পতিবার (২৯ফেব্রুয়ারী)। মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত ৫৩৩২/২০১৫ নম্বর রিটের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব বালুমহালের ইজারাসংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

জানা যায়, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সোমেশ্বরীর বালুমহাল ইজারা নিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্ষা না করে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু ও পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন। সোমেশ্বরীর শাখা নদী আত্রাখালীর মুখ বালু ফেলে ভরাট করে ফেলে তারা। বালু রাখার জন্য ইজারা গ্রহীতা ইতিপূর্বে দুর্গাপুরের বিরিশিরি পিসিনল বিদ্যালয়ের মাঠও ব্যবহার করেছে যা বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে। ভেজা বালু পরিবহনের ফলে দুর্গাপুর পৌর-শহরের রাস্তা ও শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক সাধারণের চলাচলের অনুপযুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।

একসময় সোমেশ্বরী পাওয়া যেত মহাশোলসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত হাজারও শ্যালো মেশিন থেকে নির্গত পোড়া মবিল ও তেল নদীর পানিতে মিশে। ফলে নদীটির সৌন্দর্য বিনষ্ট ও মহাশোলসহ বিলুপ্ত হয় শতাধিক প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদী ও নদীতির এলাকায় অবস্থিত দুর্গাপুরসদরের তেরীবাজার, মোক্তারপাড়া, ভবানীপুর, ফারাংপাড়া, কামারখালী, কুল্লাগড়া, ডাকুমারা, শিবগঞ্জ, গাঁওকান্দিয়া, গোরাইত এবং বিরিশিরি নামক গ্রামসমূহ ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। দিন রাত খননযন্ত্র ও ট্রাক চলাচলের বিকট শব্দ এবং বাতাসে মিশে থাকা বালু কণা মানুষের শ্বাসকষ্ট ও শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

ভয়ংকর বায়ু দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে চারপাশের এলাকা। এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে বেলা জনস্বার্থে হাইকোর্টে ৫৩৩২/২০১৫ নম্বর রিট দাখিল করে। শোনানী শেষে একইবছরের ২৯ জুলাই বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যহাস্থা গ্রহণের জন্য রুল জারী করেন। রুল অমান্য করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে ইজারাদাররা। এই অবস্থায় বেলা রুল বাস্তবায়ন ২ ফেব্রুয়ারী তারিখের ইজারা কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন জানালে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রীটের অনুকুলে আদেশ জারী করেন। হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষকে আদেশ দেন। আদালত নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বালু, পাথর ও মাটি উত্তোলন নিয়মিত তদারকি করতেও নির্দেশ প্রদান করেছেন, যাতে করে ইজারা গ্রহীতাগণ ইজারা-চুক্তির বাইরে গিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। হাইকোর্টের আদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দুর্গাপুরের ইউএনও ও দুর্গাপর পৌর সভার মেয়রকে আদালতের নির্দেশ পালন সাপেক্ষে কমপ্লায়েন্স দায়ের করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।