২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ময়মনসিংহ

প্রায় ২৫০ বছর পুরানো অবকাঠামো নিয়ে চলছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২৬ ১৭:২৪:৪০
...

শফিয়েল আলম সুমন, ময়মনসিংহ :
প্রায় ২৫০ বছর পূরানো অবকাঠামো নিয়ে চলছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার। ২০১৫ সালে ‘ময়মনসিংহ কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’প্রকল্প টি কয়েকদফা সময় বাড়িয়ে আজ অবধি সম্পন্ন হয় নি পকল্পটি। পরিকল্পনায় ত্রুটি, করোনা এবং ঢিলেঢালার কারনে ৮ বছরের বেশী সময় অতিক্রম হলেও প্রকল্পটির কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন ।

৬৮ একর জায়গা নিয়ে পুলিশ লাইনের কাছেই অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিংহ কারাগারের যাত্রা শুরু হয় ১৭৯২ সালে । ১৯৯৭ সালে এটি কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত হয়। ২০১৫ সালে ‘ময়মনসিংহ কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’ রিভাইস ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (আরডিপিপি) শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই হাজার বন্দি ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ১২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। কিন্তু পরে সময় বাড়িয়েও তা শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই লেগে যায় দুই বছর। ২০১৭ সালের দিকে কাজ শুরু হলেও কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে প্রকল্পের পরিকল্পনা ত্রুটি। যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে যায় পুরো কাজ। এরপর আর শুরুই করতে পারেনি থেমে থাকা কাজ । অবকাঠামো নির্মানে জিনিস পত্র মূল্যো বৃদ্ধি কাল হয়ে দাড়ায় জেল খালার অবকাঠামো নির্মানের কাজ । ২০২৩ ফেব্রয়ারিতে প্রকল্পে বেশ কিছু সংশোধনী এনে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রথমে ১৩টি প্যাকেজে কাজ হলেও তা বৃদ্ধি হয়ে এখন ৩০টি প্যাকেজে কাজ হবে। পৃথক ঠিকাদার এসব কাজ করবেন। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে এখন পযর্ন্ত শুরু না হওয়া এসব কাজ ২০২৫ এ শেষ না হওয়ার সম্ভবনাই বেশী বলে আনেকে দাবী করেন।

উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে- ছয় তলা বিশিষ্ট দু’টি বহুতল বন্দি ভবন, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পুরুষ বন্দিদের আধুনিক হাসপাতাল, নারী বন্দিদের জন্য আলাদা বহুতল ভবন, তিন শতাধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কারারক্ষীদের বহুতল ভবন, কিশোর বন্দিদের জন্য দ্বিতল ভবন, মানসিক রোগে আক্রান্ত পুরুষ বন্দিদের জন্য হাসপাতাল, চারটি ছয় তলা বিশিষ্ট বহুতল আবাসিক ভবন, সাক্ষাৎ কক্ষ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ইত্যাদি। নির্মিত হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট কারা হাসপাতাল, নারী ও কিশোর বন্দিদের আলাদা আবাসন ব্যবস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কারাগারে বন্দিদের ধারণক্ষমতা বাড়বে। বসবাসের জন্য সৃষ্টি হবে উন্নত পরিবেশ।
সম্প্রতি কারাগার ঘুরে জানা গেছে, কারাগারে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি কক্ষে মাত্র দুটি টয়লেট। আবাসনের অপর্যাপ্ততায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ বন্দি থাকছেন। কারাগারে বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশ মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক মামলাতেও প্রতিদিন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কারাগারের মূল অংশের সামনে কিশোর ব্যারাক, পুরুষ বন্দি ব্যারাক এবং কনডেম সেল, নিরাপত্তা অন্যান্য সেল নির্মাণে কাজের তথ্য সম্বলিত একটি বোর্ড রয়েছে। অসুস্থ বন্দীদের শয্যা সংখ্যা ৭২ টি থাকলেও বাস্তবে কাগজে কলমে ২২ জন অসুস্থ বন্দি রাখতেই হিমসিম খেতে হয় ।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায় এর মধ্যে চারটি আবাসিক ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া কারাগারের সীমানা প্রাচীরের ৬০ শতাংশ, গোডাউনের শতাংশ, সাক্ষাৎ কক্ষের ৯০ শতাংশ, কারারক্ষী ভবনের ৭৫ শতাংশ, ও দু’টি বন্দি ভবনের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো দ্রুতই শেষ হবে। তবে গড়ে ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে। শুরুতে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় চলে যায়। পরবর্তীতে প্রকল্পের নানা সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় কাজ আটকে থাকে। এরপর করোনা পরিস্থিতিও সামনে আসে। প্রকল্পটির নানা পরিবর্তন এনে একটি মাস্টার প্লান তৈরি করে প্রকল্প সংশোধন হয়ে অনুমোদন হয় চলতি বছর। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। আগে প্রকল্পে ১৩ টি প্যাকেজ থাকলেও এখন ৩০টি প্যাকেজ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৯৯৬ জনের। পুরষ বন্দীর ধারন ক্ষমতা ৯৭৩ জন পুরুষ হাজতি ও কয়েদী এক হাজার ৮শ চল্লিশ এবং নারী বন্দি ধারণ ক্ষমতা ২৩ জন বিপরীতে হাজতি ও কয়েদি ৬৩ জন । যা ধারণক্ষমতার দুই গুণের বেশি। ফলে প্রবল আবাসন সংকট রয়েছে কারাগারে। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বন্দিরা উন্নত পরিবেশ পাবে বলে আশা করছেন ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ ।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয়, জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্দিদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সে দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। যথা সময়ে কারাগার সম্প্রসারণের শেষ হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।