শেরপুর :
কথায় আছে ‘যার নাই কোন গুণ তার নাম বেগুন’। কিন্তু প্রচলিত এ কথাটি মিথ্যে প্রমাণ করেছেন শেরপুরের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকেরা। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ বেগুন রাজধানী ঢাকাসহ শেরপুর জেলা শহরের বিভিন্ন উপজেলা ও দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করছে। চলতি মৌসুমে বেগুনের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি ও কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠেছে হাসি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শেরপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বেগুনের আবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। মূলত সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের পয়স্তীরচর, শাহাব্দীরচর, গোয়ালপাড়া, ৬ নম্বর চর, ৭ নম্বর চর, চরভাবনা; চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকাতেরঘোপ, চরজঙ্গলদী; লছমনপুর ইউনিয়নের লছমনপুর, কুসুমহাটি, নামাশেরীরচর ও দীঘলদী এলাকায় বিভিন্ন জাতের বেগুনের আবাদ বেশি হয়। এর মধ্যে ‘বোতল বেগুন’ নামের বেগুনটি ভোক্তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত. ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এসব এলাকায় বেগুন উৎপন্ন হয়। প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ২ মণ বেগুন উৎপন্ন হয়। এ অঞ্চলের বেগুন খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। ভাজা-পোড়া থেকে শুরু করে ঝোল-তরকারি সব রান্নাতেই এটি ব্যবহার করা যায়।
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারী) সদর উপজেলার প্রসিদ্ধ কামারেরচর বাজারে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক কৃষক বড় বড় খাঁচা ও ডোলে করে বাজারে বেগুন এনেছেন বিক্রির জন্য। এটি পাইকারি বাজার। বাজারে ট্রাক, পিকআপসহ ১৫ থেকে ২০টি যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে সবজি পরিবহনের জন্য। এখান থেকে পাইকারেরা বেগুনসহ অন্যান্য সবজি পাইকারি দামে কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করেন। এ সময় কথা হয় কয়েকজন কৃষক ও পাইকারের সঙ্গে।
সদর উপজেলার চরমোচারিয়া চৌধুরীবাড়ী গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় এক মাস বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাঁর লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন।
উপজেলার ডাকাতেরঘোপ গ্রামের কৃষক মুনাহার বলেন, দুই বিঘা (৬৬ শতক) জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন তিনি। খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। চলতি মওসুমে বেগুনের দাম বেশ ভালো। বর্তমানে ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা মণ দরে বেগুন বিক্রি করছেন। এতে তাঁর ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
কামারেরচর বাজারের পাইকারি বেগুন ব্যবসায়ী মো. আলী হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শেরপুরের চরাঞ্চলে উৎপাদিত বেগুনের অনেক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ বেগুন ২০০০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা দরে কিনছেন। যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশী। এতে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন এবং কৃষকের মুখেও হাসি ফুটে ওঠেছে। বর্তমানে প্রতিদিনই শেরপুর থেকে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে বেগুন বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়। এসব বেগুন গড়ে ২ হাজার ২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয় বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন । শেরপুরে উৎপাদিত বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে আছে পানি, আমিষ, স্নেহ, শ্বেতসার, আঁশ, ভিটামিন-এ ও সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, গন্ধক, ক্লোরিন, অক্সালিক অ্যাসিড ইত্যাদি। উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকেরা বর্ষা মৌসুমের পরপরই এ বেগুন আবাদ করেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বেগুন উৎপন্ন হয়। ফলে আর্থিকভাবে তাঁরা লাভবান হয়ে থাকেন।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL