বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট কোনো কাজে এলো না। মোদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাতমাস আগে তৈরি হওয়ায় জোট ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মোদি সরকার তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসবে তা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তের সমীকরণ কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনই বলা সহজ নয়! তবে এ প্রেক্ষাপটে গতবছর জুন মাসে তৈরি হওয়া ২৮ দলের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ যে খুব একটা আলো দেখাতে পারছে না তা পশ্চিমবঙ্গের পর বিহার রাজ্যও এক প্রকার প্রমাণ করে দিয়েছে।
এরই জেরে পশ্চিমবঙ্গের পর প্রতিবেশী বিহারে রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) প্রধান নীতিশ কুমার, দেড় বছরের মাথায় ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে আবার বিজেপির সহযোগী হয়েছে।
রোববার(২৮ জানুয়ারি) সকালেই জেডিইউ পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকেন নীতিশ। এরপর বিহারের রাজ্যপাল রাজেন্দ্র অরলেকরের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফাপত্র দেন নীতিশ। রাজ্যপাল তা গ্রহণের পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ। রোববার বিকেলেই বিজেপির সমর্থন নিয়ে আবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন তিনি। মূলত, বিজেপির শর্ত ছিল নীতিশ যদি আবার এনডিএ-তে (বিজেপি জোট) ফেরে, তাহলে আপত্তি নেই বিজেপির। তবে আগে ‘মহাগঠবন্ধন’ ভেঙে বের হতে হবে নীতিশকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি মোদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা কথা জানার পর, প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ ছেড়েছিলেন নীতিশ। সেবার লোকসভা ভোটে একা লড়ে ভরাডুবি হয় নীতিশের দলের। এরপর ২০১৫ সালের বিহারের বিধানসভা ভোটে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের দল আরজেডি এবং কংগ্রেসের সমর্থনে জোট (মহাগঠবন্ধন) গড়ে জয়ী হন নীতিশ। কিন্তু পরবর্তীতে লালুপ্রসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের ২০১৭-য় বিজেপির সঙ্গে হাত মিলেয়েছিলেন তিনি।
এরপর ২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ফের মহাগঠবন্ধনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী হন নীতিশ। রাজ্যটির উপমুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব পায় রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তথা লালুর ছেলে তেজস্বী যাদব। বাইরে থেকে সমর্থন পায় বামসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ জন জয়ী বিধায়কের সমর্থন। বর্তমানে লালুর দল আরজেডির রয়েছে ৭৯ জন বিধায়ক।
এছাড়া কংগ্রেসের ১৯ জন, সিপিআইএমএল লিবারেশনের ১২, সিপিএমের ২, সিপিআইয়ের ২ এবং ১ নির্দলীয় বিধায়ক রয়েছেন বিজেপি বিরোধী মহাগঠবন্ধনে। এছাড়া হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়েসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর একজন বিধায়ক জয় পেয়েছিল বিহার নির্বাচনে।
অপরদিকে, গত বিধানসভার (২০২০ সাল) নিরিখে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮ জন। নীতিশের রয়েছে ৪৫ জন জয়ী বিধায়ক। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবধানে নীতিশের ঝুলিতে ১২৩ আসন। বিজেপির সে সমর্থনের জোরে ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতিশ। রোববার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন নীতিশ।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের শুরু থেকে বিজেপি বিরোধী ২৮ দলকে একত্র করার কান্ডারি ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোনিয়া গান্ধীর সমর্থনে কংগ্রেস জোটের শরিক হয়েছিলেন। কারণ, তারা জানেন বর্তমান ভারতে তাদের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে একক ক্ষমতায় বিজেপির মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করতে পারবে না। আর সে কারণেই জোটে সামিল হয়েছিল ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস।
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা দেন, বাংলায় কোনো জোট হবে না। অর্থাৎ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে (সংসদ ভোট) আসন ভাগাভাগিতে, নেত্রী বাংলায় কারো সঙ্গে সমঝোতা করবেন না। তারা এ বিষয়ে একা চলার নীতি নিয়েছে। তবে নির্বাচন শেষে, তিনি ভেবে দেখবেন। তার স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের ময়দানে একাই লড়বে। জোটের বাকি শরিকরা ভেবে দেখুক তারা কি করবে।
ফলে বাকি শরিকরাও নিজেদের মতো ভাবতে শুরু করেছে। উত্তরপ্রদেশের নেত্রী মায়াবতীর দল, বহুজন সমাজ পার্টি এবং পাঞ্জাবের ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টিও (আপ) একই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভবত আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও, এবারের সংসদ নির্বাচনে একই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। ফলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ, ভোটের আগে একপ্রকার অন্ধকারে। তবে ভোট পরবর্তীতে জোট কি রূপ নেয় তা সময় বলবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ এ ভারতের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে জোট বেঁধেছিল বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলো। যা নিয়ে গত বছরের ২৩ জুন বিহার রাজ্যের পাটনায় বৈঠকও হয়েছিল। সে বৈঠকে হাজির ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, রাহুল গান্ধীসহ মোট ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। এরপর গতবছর ১৭- ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে সোনিয়া গান্ধীর ডাকা দ্বিতীয় বৈঠকে সবমিলিয়ে ২৮ দল যুক্ত হয়। সেখানেই ঠিক হয় ভারতের নামেই নতুন জোটের নাম হবে ‘ইন্ডিয়া’। পুরো নাম -ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL