নিজস্ব প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের শীত জেঁকে বসেছে। হাড় কাপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনপদ। বিশেষ করে জেলার শাহজাদপুর, এনায়েতপুর চৌহালীতে মঙ্গলবার সকালে দিনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর অবস্থিত আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা
জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে দিনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে স্থানীয়দের মত, ২৫-৩০ বছরের মধ্যে এমন শীত আগে কখনো উপলব্ধি করেনি এই অঞ্চলের মানুষ। যে কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাহিরে বের হচ্ছে না। যারাও বের হচ্ছে উপযোগী পোশাক পরে। তবুও শীতের কাছে কাহিল হয়ে পড়েছে তারা।
শাহজাদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের বৃদ্ধ দিনমজুর আয়নাল হক, মোশারফ হোসেন জানান, প্রচন্ড শীত বাড়ির বাহিরে বের হও দুষ্কর। ঘন কুয়াশা আর একদিকে শীতল বাতাস এই শীতকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন একবার শীত পড়েছিল গত ২৫-৩০ বছর আগে।
তিনি আরো জানান, আমাদের এলাকার দরিদ্র সাধারণ মানুষ রিকশা ভ্যান চালনা, দিনমজুর ও তার শ্রমিকের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে। এই শীতে একদিকে আমাদের আয় কমে সংসার পরিচালনা দূর হ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি শীত বস্ত্রের অভাব থাকলেও কোন কম্বল সহায়তা আমরা এখনো পাইনি।
এদিকে জেলা তান কর্মকর্তা জানিয়েছেন বর্তমান শীতে দুই দফা জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সচেতন মহল মনে করছে এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
অপরদিকে জেলার যমুনার চর অঞ্চল খ্যাত দুর্গম কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার মানুষ প্রচন্ড শীতে দুর্ভোগ বেশি পোহাচ্ছে। যমুনা নদী থেকে মাছ আহরণ ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরতা থাকলেও এই শীতে তারা কাজে বের হতে পারছে না। এজন্য বেকার সময় কাটছে তাদের।
এছাড়া তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও সদর থানায় প্রচন্ড শীত ঘন কুয়াশায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে। উৎপাদন ব্যাহতে শ্রমিক ও মালিকে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। জেলার ১৪ হাজার ৮৪৯টি ছোট-বড় কারখানার হস্ত ও ইঞ্জিন চালিত ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯ টি তাঁতে অতীতের মত শাড়ি লুঙ্গি উৎপাদন করতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশের গ্রামীন পর্যায়ের সিরাজগঞ্জ জেলার সম্ভাবনাময় এই পেশার সাথে জড়িত ২০ লাখ ৮ হাজার মানুষ চরমভাবে বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে শ্রমিকেরা দিনে কাঙ্খিত উৎপাদনে যেতে না পারায় আর্থিক সংকটে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড শীতের কারণে আবার অনেকেই কাজে যোগ দিচ্ছে না। পাশাপাশি দরিদ্র এই মানুষগুলোর রয়েছে শীতবস্ত্রেরও অভাব।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক আব্দুল কুদ্দুস, ইকবাল হোসেন,কানছু সরকার, জানান, শীতে আর আগের মত কাজ করা যায় না। কুয়াশায় সুতা থানা ভিজে থাকায় কয়েকদিন তাঁত বুনানো দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পেট চালাতে কাজে আসলেও এখন অর্ধেক কাজই করা যায় না। আগে শাড়ি লুঙ্গি বুনিয়ে দিনে ৫০০ টাকা আয় করা গেলেও এখন দেড়, ২০০ টাকার উপরে কাজ করা যায় না।
এদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাঁত মালিকদের পড়তে হয়েছে বিপাকে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL