কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ):
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কামাল বিশ্বাস (৪৫) নামের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কামাল কালীগঞ্জ উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত আবদুল গনির ছেলে। সোমবার দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাতে বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন রাতে বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে পারিবারিক গোরস্থানে গলায় রশি পরানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পায় সকালে মাঠে কাজ করতে যাওয়া গ্রামবাসি। দড়ির অর্ধেক গাছে ঝুলছে এবং অর্ধেক তার গলায় পেচানো ছিল।
কামালের শ্যালক পলাশ মিয়া সকালে গ্রামবাসির কাছে খবর পেয়ে বাড়িতে খবর দেয়। পরবর্তীতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ মর্গে পাঠায়। কামাল বিশ্বাস পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে কে নিয়ে তার সংসার। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতেন তিনি। একমাত্র অনার্স পড়ুয়া ছেলে সাগরের লেখাপড়ার খরচ জোগানো ও মাত্র দেড় মাস আগে জন্ম নেওয়া মেয়ে মুনতাহার খাতুনের প্রতিদিন প্রত্যাহয়িক ব্যয় এবং সংসার খরচ, নিজের শারীরিক অসুস্থতা জনিত ঔষধ ক্রয় ও অন্যান্ন খরচ করতে পাচ্ছিলেন না।
এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছিল। সংসারের অভাব অনটনের কারনে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। সংস্থার লোকজন পাওনা টাকার জন্য বাড়িতে এস তাকে নিয়মিত চাপও দিতেন। নিজের বলতে কিছুই ছিল না তার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটাবাড়ির জমিটুকু দেনা পরিশোধের জন্য চাচাত ভায়ের কাছে প্রায় ৪ বছর আগে বিক্রি করে দেন। এসব কারণে নিঃস্ব কালাম মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। সাংসারিক,মানসিক এইসব যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের জন্যই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে স্থানীয়রা জানান।
কালাম বিশ্বাসের চাচাতো ভাই আব্দুল কাদের জানান,আমার এই ভাইটি খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলছিল। সংসারে বিভিন্ন প্রয়োজনে তাগিদে অনেকের কাছ থেকে সে ধার দেনাও করে। ডায়াবেটিক ও চোখের সমস্যার কারণে শারীরিক ভাবে কর্মশক্তি সেভাবে না থাকাই তেমন কাজও করতে পারত না। একমাত্র দেড় মাস বয়সী মেয়ের জন্মনিবন্ধন করার জন্য ২৫ টা ফি দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। এনজিওর লোক তার বাড়িতে এসে পাওনা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। মূলত ঋণের বোঝা পরিশোধ করতে না পেরেই সে আত্মহত্যা পথ বেছে নেয়।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসছি ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঝিনাইদহে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL