নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া ব্যুরো :
নন্দীগ্রাম ২০শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতালে নামমাত্র বর্হিঃবিভাগ চালু রয়েছে। দিনে পাঁচঘন্টা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা মিললেও হাসপাতালে থাকে না ওষুধ। বিছানাপত্র ও খাবার ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে রোগী ভর্তি হয় না। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ বছর আগে সাড়ে তিন কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণ হলেও চালু হয়নি অন্তঃবিভাগ।
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর ও শহরের মধ্যে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ২০শয্যা হাসপাতাল। সবধরনের রোগের চিকিৎসা দিতে সক্ষম হিসেবে নির্মাণকৃত হাসপাতালে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার ও প্যাথলজি ল্যাব রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নেই। বর্হিঃবিভাগ চালু হওয়ার পর থেকেই সপ্তাহে ৬দিন ডাক্তার বসেন। রোগীরা প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে এলেও ওষুধ সংকটের কারণে ফিরে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন। হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলো সংস্কার না করায় সেখানে থাকারমতো পরিবেশ নেই। ঘুনপোঁকা দরজা-জানালায় বাসা বাঁধায় খুলে পড়ছে দরজা জানালার কপাট। নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় চুরি হয়ে গেছে পানির লাইনের পাইপ। অত্যাধুনিক কিছু চিকিৎসা সামগ্রী থাকলেও জনবল নিয়োগে কোনো উদ্যোগ নেই। পূর্ণাঙ্গভাবে হাসপাতাল চালু না হওয়ায় দেড়যুগ ধরে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ। জনবল নিয়োগ করাসহ অন্তঃবিভাগ চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
সুত্র জানায়, হাসপাতালে ২৫টি পদের মধ্যে ১১জন জনবল রয়েছে। এরমধ্যে অনুপস্থিত ১জন প্যাথলজিস্ট, ১জন প্যাথলজিস্টের সহকারী, ৫জন ডিপ্লোমা নার্স বিজরুল এলাকায় অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকেন। নন্দীগ্রাম ২০শয্যা হাসপাতালে বর্তমানে ১জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), ১জন মেডিকেল অফিসার, ১জন চিকিৎসকের সহকারী, ফার্মাসিস্টসহ মোট চারজন সপ্তাহে ৬দিন পাঁচঘন্টা করে নিয়মিত ডিউটি করেন। হাসপাতাল নির্মাণকাল থেকে সৃষ্ট ২৫ পদের মধ্যে ৪জন কনসালট্যান্টসহ ১৪পদের জন্য দেড়যুগেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তা ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরের জনপদ বিজরুল এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। শাজাহানপুর ও কাহালু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষা এলাকার ওই হাসপাতালে গ্রামীণ পথে রোগীর আসা-যাওয়ার চেয়ে অল্পসময়ে মহাসড়ক পথে বগুড়া শহরের হাসপাতাল কাছে হয়। পৌরসভা ও সদরের আশপাশ এলাকার মানুষের জন্য তাৎক্ষনিক সেবার জন্য হাসপাতাল নেই। চিকিৎসার জন্য রোগীরা ৪০ কিলোমিটার দুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুঁটছেন। যেকারণে একমাত্র ২০শয্যা হাসপাতাল চালু হলে জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
২০শয্যা হাসপাতালের ইনচার্জ (চিকিৎসকের সহকারী) আহসান হাবীব জানান, স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে হাসপাতালে বর্হিঃবিভাগ চালু রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন রোগী আসেন, তবে ওষুধ সংকট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (বিজরুল) তত্ত্বাবধায়ক ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, ২০শয্যা হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয় না। যেকারণে সেখানকার কয়েকজন জনবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
সুত্রমতে, ২০০১-২০০২ অর্থবছরে তৎকালীন বিএনপি সরকার আমলে নন্দীগ্রাম শহরে (বর্তমানে পৌরসভা সড়ক) ২০শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০২ সালে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে (নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট-সিএমএমইউ) হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০৫ সালে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেয়ায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আটকে যায়। ২০০৬ সালের ১৮অক্টোবর বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহুর্তে তড়িঘরি করে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা। এরপর ২০০৮ সালে হাসপাতালের জন্য পদ সৃষ্টি করা হয়।
নন্দীগ্রাম ২০শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. একেএম শাহিনুর হাসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী জনবল সংকট দেখিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। রোগীর খাবার, ওষুধ ও রোগীর বিছানাপত্রের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন। লোকবল ও সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। অন্তঃবিভাগ চালু হলেই পৌর শহরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ তাৎক্ষনিক কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাবেন।
বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটি পূণাঙ্গভাবে চালুর ব্যাপারে সংসদে কথা বলবো। ২০শয্যা হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, সরঞ্জামাদিসহ বিভিন্ন বরাদ্দের জন্য সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্শনের মাধ্যমে অবহিত করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানাবো।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL