২৩-নভেম্বর-২০২৪
২৩-নভেম্বর-২০২৪
Logo
রাজশাহী

বগুড়া পোড়াদহ মেলায় একদিনেই ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-১৪ ১৫:৪৮:২৩
...

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া ব্যুরো :
৪০০ বছরের বেশি পুরনো বগুড়ার ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলা শুরু হয়েছে। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের দিনে প্রথা অনুযায়ী মাঘের শেষদিনের নিকটবর্তী বুধবারে জেলার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান বসেছে। একদিনেই ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। মেলায় আনা হয়েছে সামুদ্রিকসহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামীণ জীবনে টাটকা মাছের স্বাদ দিতেই মেলার এ আয়োজন।

বাংলাদেশে গ্রামীণ মেলাসেমূহের মধ্যে বগুড়ার পোড়াদহ মেলা অন্যতম। ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলাটি সন্যাস মেলা ও মাছের মেলা নামে পরিচিত। তবে হাল আমলে এসে মেলাটি জামাই মেলা নামে বেশি পরিচিত। যে কারণে রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে যেতে চলছে জামাইদের নীরব প্রতিযোগিতা।

মেলাটি প্রায় চারশত বছর পূর্বে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। পরে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে সেটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ইছামতী নদীর পাড়ের ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পূজার দিনটি একটি গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করে চলে গেলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ন্যাসী পূজা বন্ধ করে দেননি। এভাবেই বাড়তে থাকে মেলার পরিচিতি।

মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকত দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইর মাছ। তবে, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করায় তিন বছর ধরে মাছ‌টি বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। পুকুর-নদী-বিলের তাজা রুই, কাতলা, ব্রিগেড, ব্লাককার্প, গুজিয়া, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাশ ছাড়াও আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক হিমায়িত মাছ। এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ ৪০ কেজি ওজনের গোলপাতা বা পাখি মাছ। দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার ভিন্নমত থাকলেও বেচাকেনা চলছে জমজমাট। পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ বড় সাইজের মাছের পরেই বড় এবং বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টির। পাশেই রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাসসহ ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড।

ফরিদপুর থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী ইছাহক আলী ও আব্দুল মান্নান জানান, বগুড়ার মেলাটির বিষয়ে জানতে পেরে তারা সামুদ্রিক মার্লিন মাছ কক্সবাজার থেকে নিয়ে এসেছেন। মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল ও হান্নান বলেন, আমরা দেশীয় প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছি। মোট ১০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে আসা হয়েছে। তারা আশা করছেন সব মাছ বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। একেকটা রুই-কাতলের ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ১২ কেজি ওজনের রুই কাতল ৯০০ টাকা কেজি। সিলভার কার্প ১০ কেজি ওজনেরটা ৫০০ টাকা কেজি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা থেকে ১৩৫ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন আনারুল নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী। তিনি জানান, একদিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার উপরে মাছ বিক্রি করবেন তারা।

মেলায় আসা রিফাত, জাহিদ ও মিজানুর নামের তিনজন জানান, তারা ওই এলাকার জামাই। শ্বশুরবাড়ীর দাওয়াতে এসেছেন। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর জামাইদের দাওয়াত করা হয়। তারা বলেন, মেলায় মাছ কিনতে এসেছি। ঈদের দিনের মতো আনন্দ করি এই মেলায়।

মনির হোসেন নামে আরেক জামাই জানালেন, মেলা উপলক্ষ্যে অনেক বাড়িতেই কিস্তি লোন পর্যন্ত নেয়া হয়। আমার শ্বশুর কিস্তির লোন তুলেছেন ৪০ হাজার টাকা। সকালে শাশুড়ী আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমি যেহেতু এলাকার জামাই, এজন্য আমাকে সবচেয়ে বড় ১০ থেকে ১৫ মাছ কেজি ওজনের কিনতে হবে। ৫ কেজির মতো মাংস এবং মিষ্টি কিনতে হবে। মেলা উপলক্ষ্যে আমরা সবাই একত্র হতে পারি। এটা আমাদের কাছে অনেক আনন্দের।