নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া ব্যুরো :
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করলো জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের অংশ সিরাজগঞ্জেও জমির মালিকদের নামে নোটিশ প্রস্তুতের কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল বগুড়ার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা গাজী মুয়ীদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অধিগ্রহণ পর্ব শেষ করে আগামী বছরের (২০২৪) শুরুতেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্পের নকশা সূত্রে জানা গেছে, ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। বগুড়া জেলা সীমানায় অধিগ্রহণ করা হবে ৪৭৯ দশমিক ১৫ একর। বাকি ৪২০ দশমিক ৬৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলায়। ভূমি অধিগ্রহণ খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য প্রকল্পে এক হাজার ৯২১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমানে বগুড়া থেকে সড়ক পথে ঢাকা পৌঁছাতে লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব।
বগুড়া থেকে রেলপথে ঢাকা যেতে সান্তাহার, নাটোর এবং পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথে ঘুরে যেতে হয়। এতে করে সময়ের অপচয় এবং রেলের অতিরিক্ত পথ যেতে খরচ বেশি হয়। এ অবস্থায় বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য বগুড়াসহ উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল।
তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রকল্প অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় ঋণের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে ভারত। শুরুতে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি হলো বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার।
সান্তাহারের দিক থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো যাতে বগুড়া স্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করতে পারে সেজন্য কাহালু-রাণীরহাট রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে রাণীরহাটে একটি জংশন নির্মাণ করা হবে। আরেকটি জংশন হবে সিরাজগঞ্জে। এছাড়া নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলা সীমানায় শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়ায় ৬টি স্টেশন স্থাপন করা হবে।
এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য এ পর্যন্ত ২৫ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছর আরও ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নথি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL