নিজস্ব প্রতিনিধি
খানসামা (দিনাজপুর) :
বিআরটিসি বাস চাপায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে নিহত দুই ভ্যানচালকের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে শোকের মাতম।মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় পুরো এলাকায়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দিশেহারা দুই পরিবার ও সন্তানরা।
ঐ দুই পরিবারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের সদস্যদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিলো চারপাশের পরিবেশ। স্বামীকে হারিয়ে শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তাদের স্ত্রী। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাদের সন্তানরা। মৃত্যুর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে পরিবার।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের রানীরবন্দর বাজারে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বিআরটিসি বাস চাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন এবং আহত ৫ জন।
নিহত দুই ভ্যান চালক হলেন উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের প্ল্যান বাজার এলাকার ইসমাইলের ছেলে ভ্যানচালক নজুরুল ইসলাম নজু (৪৫) ও বটতলী এলাকার আজিমদ্দিনের ছেলে ভ্যানচালক আব্দুল মজিদ (৪০)। অপর নিহত দুজন হলেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হরিখোলা গ্রামের মৃত মংসু চাকমার ছেলে লতা ইয়া চাকমা (৫২) ও চাকমা সাইঙ্হো চাকমা (৪৫)। তারা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। চাকমা দিনাজপুরে মধু বিক্রি করতে আসেন।
এই অবস্থায় বাস চাপায় নিহত খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের প্ল্যান বাজারের নজুরুল ইসলাম নজু ও বটতলী এলাকার আব্দুল মজিদ এর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (০৬ জানুয়ারী) সকালে সহায়তা প্রদান করা হয়। এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, ইউএনও মো: তাজ উদ্দিন, পিআইও এনামুল হাসান ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ফতেজংপুর এলাকার ট্রিলিয়ন গোল্ডে কোম্পানিতে কর্মরত স্ত্রীকে রেখে রানীরবন্দরে আসেন নিহত ভ্যানচালক নজুরুল ইসলাম নজু। আর ভ্যানচালক আব্দুল মজিদ জীবিকার সন্ধানে সকালবেলা বের হয়।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালান ভ্যানচালক নজুরুল ইসলাম নজু ও পরচুলা কারখানায় তাঁর স্ত্রী। অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আব্দুল মজিদের সংসারে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী বিআরটিসির দ্রুতগতির একটি বাস রানীরবন্দর বাজারে পৌঁছালে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী চার্জারভ্যানকে চাপা দেয়। এতে টং-এর চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৪ জন নিহত হন।
এ দুর্ঘটনার পরই স্থানীয়রা প্রায়ই দুইঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে সড়কে যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ ঘটে পরে প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত খানসামা উপজেলার দুই ভ্যানচালকের পরিবারকে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনা করা হবে বলে দুই পরিবারের সদস্য নিশ্চিত করে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL