আব্দুল্লাহ হেল বাকী, জয়পুরহাট
মৌমাছির সঙ্গে এক ঘরে বসবাস। ওরা আমার ঘরের সন্তানের মতই। স্নেহ-আদর পেয়ে দিন দিন সন্তানের মতই বড় হচ্ছে। এখন ওরা আমাদের পরিবারের সদস্য ও ঘরের লক্ষ্মী। কথায় বলে দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষলেও সুযোগ পেলে সাপ ছোবল মারে। মৌমাছিও হয়না কখনও বন্ধু। কিন্তু সব আশংখাকে মিথ্যা করে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মৌমাছির সাথে বসবাস করছে হাজীর পরিবার।
বাড়িটির তিন তলার বারান্দায় ছোট বড় ১১-১২টি বাসা বেধে বাস করছে মৌমাছি। হাজার হাজার উড়ন্ত মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দে মুখরিত পরিবেশ। আর এই মৌচাকের নিচেই বাড়ীর সবাই চলাচল করছে নির্ভয়ে। এতে কোন ক্ষতিও করছে না তাদের। বরং চলাফেরা করার সময় পরিবারের সদস্যদের মৌচাকে মাথা বা হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো হুল ফোটায় না। চাকগুলো লম্বা ও বড় হয়ে এতই নিচে ঝুলে এসেছে যে বাড়ির মানুষকে মাথা নিচু করে চলাচল করতে হয়। এমনি একটি বাড়ী পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হাবিবুর রহমানের (হবু হাজী) বাড়ি।
একদিন হঠাৎ এক ঝাঁক মৌমাছি ভোঁ ভোঁ শব্দে প্রবেশ করে বারান্দায় ভিতরে চাকবাঁধে। বছরের পর বছর মৌমাছিগুলো চাক বেধে আছে। কয়েক বছর ধরে মৌমাছিগুলো বারান্দায় চাক বাধলেও একবারও মধু সংগ্রহ করা হয়নি। সব সময় চলাচল করছি কাউকে কামড় দেয়নি। এভাবে কথাগুলো বললেন ওই বাড়ির মালিক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হাবিবুর রহমান (হবু হাজি)। ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আর এ মৌমাছির চাক দেখার জন্য মানুষ প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে আসেন। সকাল থেকে রাত অবধি মানুষ হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভিড় জমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় চাকগুলো লম্বা হয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। মৌ চাকের মৌমাছিগুলো ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে বেড়ালেও কাউকে হুল ফোটাচ্ছে না। এ যেন মৌমাছি আর মানুষের অন্য রকম এক ভালবাসা। এদিকে মৌমাছি আর মানুষের একই বসবাসের খবর শুনে মৌমাছির এই চাকগুলো দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসেন এলাকাবাসী।
মৌচাক দেখতে আসা রফিকুল আলম বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ীতে মানুষ আর মৌমাছি একই সঙ্গে বসবাস করছে শুনেছিলাম। আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। সত্যিই এ এক অন্য রকম ভালবাসা।
বাড়ির মালিক উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান (হবু হাজী) বলেন, বছরের পর বছর মাছিগুলো চাক বেঁধে আছে। এখন পর্যন্ত কাউকে কামড়ায়নি। অনেক মানুষ মধু চাক থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য এসেছিল। আমি মধু সংগ্রহ করতে দেয়নি। যেহেতু মৌমাছিগুলো আমার বাড়ী নিরাপদ মনে করে বাসা বেঁধেছে এবং এরা যেহেতু আমাদের কোন ক্ষতি করে না সে কারনে মৌমাছিগুলোকে আমরা পরিবারের সদস্যের মতোই মনে করি। আগে মাত্র ছোট দুটি চাক ছিল বারান্দার দরজার কাছে। আরও মাছি এসে অনেকগুলো চাক বেধে কয়েক বছর থেকে বাস করছে। এজন্য মৌমাছিগুলোকে আমরা পরিবারের সদস্যর মতোই মনে করি। মৌমাছিগুলো চাক বাঁধার পর থেকে বারান্দায় চলাফেরা কাপড় শুকানো ও রান্না বান্নার কাজ করা হয়। এসময় চাকে হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো কামড় দেয় না।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নিয়ায কাযমির বলেন, মৌমাছিগুলো যেখানে নিরাপত্তা বাঁচার পরিবেশ ও খাবাবের ভালো সু-ব্যবস্থা পায় সেখানেই তারা বাসা বাঁধে। মৌমাছিকে বিরক্ত বা আঘাত করলে আত্মরক্ষার্থে তারা হুল ফোটায়। মৌমাছি মানুষ বা গরু ছাগলকে অতিরিক্ত হুল ফোটালে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মৌমাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা ভালো।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL