২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

ফিলিস্তিনে আবারও বর্বর হত্যাকাণ্ড

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০৩-০১ ১৯:৪১:২২
...

বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে

ফিলিস্তিনে নারকীয় হত্যাকাণ্ডগুলো দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা। আগেও একজন-দুজন করে বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে বিশ্বের কোনো দেশ, সংগঠন কিংবা বৈশ্বিক সংস্থা এগিয়ে আসেনি। ইসরায়েলিরা হিংসাত্মক হত্যাকাণ্ড এখনো ধীরলয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের আরব রাষ্ট্রগুলোও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নিতে পারেনি। গতকাল দৈনিক দিনপরিবর্তনসহ সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি হৃদয়বিদারক সংবাদ। সংবাদ ভাষ্য মতে, গাজায় ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলায় ১০৪ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ৭৬০ জন।

ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি বর্বর ঘটনা। খাদ্যসংকটে পড়া একদল নিরস্ত্র মানুষ এ সময় ত্রাণের আশায় সমবেত হয়েছিল। এরমধ্যে ছিল নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। আক্রমণস্থলে ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ হামাসের কোনো ক্যাম্প বা স্থাপনাও ছিল না। সেখানে কোন যুক্তিতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাল? সমস্ত মানবতার সীমা অতিক্রম করে কেন এ জঘন্য ঘটনা ঘটানো হলো?

বিগত পাঁচ মাস আগে ইসরায়েইলি বাহিনীর হামলা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে মারা গেছে ৩০ হাজার মানুষ। এরমধ্যে ১২ হাজারই শিশু। আহত হয়েছে ৭০ হাজার। এই কয়েক মাস ধরে চলা বর্বরতাকে কোনো বিশ্বশক্তি রুখতে এগিয়ে আসেনি। এমনি কি বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর একটি আমেরিকা ইসরায়েলিদের অস্ত্রসহ যাবতীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা প্রকাশ্যে বলেছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু এ কোন আত্মরক্ষা? প্রয়োজনে ওরা প্রতিপক্ষ সশস্ত্র হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে তৎপরতা চালাতে পারে। কিন্তু তা না পেরে কাপুরুষোচিতভাবে নিরীহ ফিলিস্তিনি শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের কেন হত্যা করছে?

আমেরিকার আগের সরকার ইসরায়েলিদের সমর্থনে আরববিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছিল। ইসরায়েলের আশপাশের কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কূটনীতিক অচলাবস্থার নিরসন করে নতুনভাবে সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করেছে। নানামুখী স্বার্থের বাঁধনে আরব দেশগুলোকে নির্দিষ্ট পরিসীমায় আবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনে চলা দীর্ঘ সংঘাত বন্ধে পরাশক্তিগুলো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। যার কারণে ইসরায়েল এমন বর্বর ঘটনার জন্ম দিয়েই চলেছে। এখানে জাতিসংঘ ও মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতা সবই অকার্যকর হয়েছে। কেউ অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য সুরক্ষার বাঁধ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ কারণে ইসরায়েল নিজেদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি মনে করছে। যেহেতু ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হত্যাকাণ্ড সৃষ্টি হওয়া নতুন কোনো ইস্যু নয়, সম্পূর্ণ পুরোনো বিষয়; সেহেতু ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে একেবারে সমূল্যে বিনাশ করার উন্মত্ততায় মেতে উঠেছে।

পৃথিবী থেকে একটি জাতিকে দিনে দিনে নিশ্চিহ্ন করার আগে জাতিসংঘ, মানবতাবাদী সব দেশ ও সংস্থাকে ভাবতে হবে, ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞের কোনো শেষ আছে কি নেই? এসব নারকীয় ঘটনা রুখতে হলে হামাস, হিজবুল্লাহসহ যত ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ আছে, তাদের সহায়তা জোরদার করতে হবে। এজন্য আরবলিগ, ওআইসিসহ মানবতাবাদী দেশগুলোকে এক সারিতে দাঁড়াতে হবে। শুধু দেশে দেশে রাস্তায় নেমে মিটিং-মিছিল করে, কোনো ফল আসবে না। ইসরায়েলের শক্ত প্রতিপক্ষ না হলে পৃথিবীর কোনো শক্তিকে তারা পরোয়া করবে না। ধীরগতিতে চালিয়ে যাওয়া আক্রমণপ্রক্রিয়া আগামীদিনেও অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে অবলুপ্ত করার নীলনকশা ওরা বাস্তবায়ন করেই ছাড়বে। আমরা মনে করি, আর বিলম্ব না করে ফিলিস্তিনিদের জাতিগত অস্তিত্ব বাঁচাতে এখনই এগিয়ে সবার আসা জরুরি।

 

/মামুন