২৯-জানুয়ারি-২০২৫
২৯-জানুয়ারি-২০২৫
Logo
সম্পাদকীয়

ভারতের আদালতে বিতর্কিত রায়, মসজিদের জায়গায় পূজা চলবে

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২৭ ১৯:৩৫:১১
...

আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতে একের পর এক মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে; যা আশপাশের দেশগুলোর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বহু হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এই মুসলিম প্রধান দেশগুলো সংখ্যালঘুদের স্বার্থবিরোধী কোনো আইন বা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেনি।

কিন্তু এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থবিরোধী একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। ভারতের অযোধ্যায় বিতর্কিত জায়গায় বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর আগে ভারতের আরেক রাজ্য আসামে মুসলমান সম্প্রদায়কে বাংলাদেশি অভিহিত করা হয়েছে এবং একটি বিতর্কিত নাগরিক আইন করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ২১ হাজার মাদরাসা শিক্ষকের সরকারি ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। বহু মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমদের করের অর্থেও ভারত সমৃদ্ধ হচ্ছে, সেখানে কেন মুসলিমদের প্রতি এমন রাষ্ট্রীয় অবিচার করা হবে? এর আগে আরো কয়েকটি ঘটনায় গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, একজন মুসলিম বিধায়ককে মামলা দিয়ে জেলে আটকেই ক্ষ্যান্ত হননি। তাকে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় উগ্রপন্থিরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব ঘটনা একেবারে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার লক্ষণ। এছাড়া ভারত সরকার আশেপাশের দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত হিন্দু, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু মুসলিম সম্প্রদায় ছাড়া। প্রশ্ন হচ্ছে, সব সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে কেন মুসলিম বিদ্বেষ থাকবে। ভারত তো অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে নিজেদের দাবি করে।

সর্বশেষ আরেকটি সংবাদ সর্বব্যাপী আলোড়ন তুলে ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়িকতাকে আরেকবার আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল। সহযোগী দৈনিকের এক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারানসির কাশি বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদের ভূগর্ভস্থ তোহাখানায় পূজা করা যাবে বলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মসজিদ কমিটির আপত্তি ও আরজি খারিজ করে এ রায় দিয়েছেন।

উচ্চ আদালতের বিচারক যদি সাম্প্রদায়িক রায় দেন, তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ন্যায়বিচার কোথায় পাবে। এর আগে নিম্ন আদালত হিন্দুদের পক্ষে একই রায় দিয়েছেন। উচ্চ আদালতে গিয়েও সেই রায় কার্যকর থাকল। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কোনো ধর্মের স্থাপনায় অন্য ধর্মের লোকদের যদি উপাসনা করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে যে এটা জাজ¦ল্য সাম্প্রদায়িকতা- এতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এ রায়কে যে প্রভাবিত করা হয়েছে, এটা সাদা চোখেও দেখা যায়। ভারতসহ বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে এই ধরনের মুসলিম বিদ্বেষী কার্যক্রম ঘটেই চলেছে।

এশিয়া মহাদেশে ভারত বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যেও একটি। এরকম একটি দেশে ক্রমাগতভাবে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেই চলেছে। উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে না। এজন্য রাজনৈতিক প্রভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে।

আমরা মনে করি, বহু সম্প্রদায়ের মিলেমিশে সহাবস্থানের দেশ ভারতে কোনো স্তরের সাম্প্রদায়িকতা থাকা উচিত নয়। এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে এবং ভারতে ঐতিহ্যের স্বার্থে সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেন এই উপমহাদেশের মানুষ মিলেমিশে সব দেশে বসবাস করতে পারে। আমরাও তাই মনে করি।

/মামুন