২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সারাদেশ

দেশ জুড়ে সুনাম ক্ষীর চমচমের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৮-১৮ ১৯:০৬:৫০
...

ভোজন বিলাসী বাঙালির কাছে মিষ্টি যেন এক অমৃত স্বাদের খাবারের নাম।  এ নাম শুনলেই জিভে পানি আসে না এমন মানুষ মেলা ভার।  আর সেটি যদি হয় সুস্বাদু তাহলে তো কথাই নেই।  এমনই এক মিষ্টির নাম রাজবাড়ীর ‘ক্ষীর চমচম’।  যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।  ক্ষীর চমচম একটু রসালো হয়।  চমচমের খাঁটি দুধের ছানার তৈরি মাওয়ার শুকনো গুঁড়া দিয়ে হয় ক্ষীর চমচম।  যা এটিকে আরো সুস্বাদু করে তোলে।  ক্ষীর চমচম ছাড়াও খাঁটি দুধের ছানা ও মাওয়া দিয়ে তৈরি নানা পদের মিষ্টি তৈরি হয় রাজবাড়ীতে।  মানুষের কাছে এসব মিষ্টির চাহিদা ব্যাপক। 

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে কারখানায় এনে দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে ছানায় রূপান্তর করে চমচম তৈরি করে।  সে চমচম মিষ্টির রসের মধ্যে ভিজিয়ে রাখে।  এছাড়া ছানা দিয়ে তৈরি নরম মাওয়াকে শক্ত মাওয়ায় পরিণত করা হয়।  পরবর্তীতে মাওয়া ভেঙে চালনি দিয়ে চেলে গুঁড়া ক্ষীর বানিয়ে চমচমের ওপরে প্রলোপ দিয়ে তৈরি সুস্বাধু ক্ষীর চমচম। 

বর্তমানে দুধ, চিনি ও কারিগরদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম।  তবে উৎসব পার্বনে দাম আরো বেড়ে যায়।  বেশ মজাদার ও সুস্বাধু হওয়ায় জেলা ও দেশের গন্ডি পেরিয়ে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচমের সুনাম ছরিয়ে পড়েছে বর্হিবিশ্বে অনেকে দেশে। 

এদিকে রাজবাড়ী জেলা শহরে বহু মিষ্টির দোকান থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি দোকানের চমচম ও মিষ্টি উল্লেখযোগ্য।  এর মধ্যে ভাদু সাহা ও শংকর সাহার চমচম সর্বত্র পরিচিত।  এছাড়া মিষ্টি বাড়ী, হোসেন মিষ্টান্ন ভান্ডার, বানিবহ দধি ভান্ডারসহ কয়েকটি দোকানের ক্ষীর চমচম বেশ জনপ্রিয়।  ক্ষীর চমচম সুস্বাধু হওয়ায় অনেকে অর্ডার করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেটজাত করে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরে।  অনেকে আবার ব্যবসার জন্য কম দামে কিনে ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে।  মিষ্টির জগতে বহু বছর ধরেই রাজবাড়ীর চমচম বিখ্যাত।  চমচমের পাশাপাশি পেয়ারা, সন্দেস, বর্ফি, কাটারিভোগ, রসগোল্লা, রসমালাই, কালোজাম, সাগর ভোগ, গোপাল ভোগ, স্পন্স মিষ্টিসহ বিভিন্ন পদের মিষ্টি রাজবাড়ীতে তৈরি হয়।  

সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলা শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ক্রেতারা মিষ্টি কেনার জন্য মিষ্টির দোকানে ভিড় করেছেন।  

শফিক মোল্লা নামে এক ক্রেতা বলেন, কর্মের জন্য ঢাকাতে থাকি।  ঢাকার অন্য যেকোনো মিষ্টি থেকে রাজবাড়ীর চমচম ভালো ও অনেক সুস্বাদু।  যার কারণে চমচম কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।  সেখানে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।  প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা করে দাম নিয়েছে দোকানি। 

সৌদি প্রবাসী আকরাম খান।  ছুটিতে এসেছেন গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর মূলঘরে।  পরিবারের সদস্য ও প্রবাসী বন্ধুদের জন্য কিনতে এসেছেন চমচম।  তিনি বলেন, রাজবাড়ীর চমচম ভালো হওয়ায় কয়েকবার  বিদেশে নিয়েছি। রাজবাড়ী জেলার এই মিষ্টি খেয়ে তার দেশি ও বিদেশি বন্ধুরা অনেক প্রশংসা করেছেন।  আমার মতো অনেক প্রবাসী দেশ থেকে যাওয়ার সময় রাজবাড়ীর চমচম সহ অনান্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়।  

আরেক ক্রেতা সমীর কুমার দাস বলেন, রাজবাড়ীর চমচমের দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম আছে।  দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাধু।  আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে, ঢাকায় অফিসে গেলে, এমনকি ভারতে গেলেও তিনি রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম নিয়ে যান।  

মিষ্টি বাড়ি নামে মিষ্টির দোকানের পরিচালক গৌড় ঘোষ, হোসেন মিষ্টান্ন ভান্ডারের পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী ও বানিবহ দধি ভান্ডারের পরিচালক লিটন ঘোষ জানান, খাঁটি দুধের ছানা ও মাওয়ার কারণে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম বিখ্যাত।  কিন্তু বর্তমানে সবকিছুর দাম ও কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩৫০ টাকার নিচে প্রতি কেজি  মিষ্টি বিক্রি সম্ভব হয় না।  জেলায় বহু মিষ্টির দোকান থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি দোকানের ক্ষীর চমচম ভালো।  

নির্মল মিষ্টান্ন ভান্ডারের উৎপল কুমার সাহা বলেন, নির্মল মিষ্টান্ন ভান্ডার ভাদু সাহা নামে পরিচিত।   গরুর দুধ দিয়ে তারা মিষ্টি তৈরি করি।  কোনো গুঁড়া দুধ ব্যবহার করা হয় না।  যার কারণে আমাদের দোকানের ক্ষীর চমচমের আলাদা সুনাম রয়েছে।   মজাদার ও সুস্বাধু হওয়ায় ক্রেতারা দেশের বাইরে আমাদের দোকানের মিষ্টি নিয়ে যায়।  এই সুনাম ধরে রাখতে মিষ্টির মান আরো ভালো করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।