মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সর্দার কান্দি ও শম্ভু হালদার কান্দি গ্রামে চলছে তীব নদী ভাঙ্গন। ওই স্থানের পদ্মার শাখা নদীর ভাঙ্গনে কয়েক দিনে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক বসত ভিটা। মানুষ দিনরাত ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। যে যেখানে স্থান পাচ্ছে সেখানেই সড়িয়ে নিয়ে ঘর রাখছে। রাস্তার পাশেসহ পরিত্যক্ত ভিটায় জড়ো করে রেখেছে মানুষের অসংখ্য ঘর । তোলার মতো স্থান পাচ্ছে না তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই স্থানের পদ্মার শাখা নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। স্রোতে বিলিন হচ্ছে বসতভিটাসহ মানুষের বাড়ি ঘর। মানুষ ঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সর্দারকান্দি সড়কের দুপাশে ভেঙে রাখা হয়েছে অসংখ্য ঘর ।
এদিকে ভাঙনের তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকিতে রয়েছে বাংলা বাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু খেকোদের দিকে। তারা জানায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলে পদ্মা নদীর ভয়াল থাবায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এ ইউনিয়নের ঘড়বাড়ী ও ফসলি জমি । এবার ভাঙ্গনের তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
নদী ভাঙ্গনের শিকার ইমরান হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে দুই মাস যাবত নদী ভাঙছে । ১৫ দিন ধরে তীব্র আকার ধারণ করছে। রাত দিনে ঘর ভেঙে সরাতে পারছে না মানুষ। ঘরবাড়ি ভেঙে রাখবো কোথায় রাখার মত জায়গা নাই। মানুষের হাত পা ধরে অন্য মানুষের বাড়িতে আমার ঘর ভেঙে রেখে আসছি । তুলব কোথায় জায়গা পাচ্ছিনা। টাকা নেই। ঘরবাড়ি ভাঙ্গতে সব খরচ হয়ে গেছে। এখন তোলার মত জমিও নাই টাকাও নাই ।
মাকসুদা বেগম বলেন, আমার ছেলে মাসুদ কৃষি কাজ করে । অনেক কষ্টে একটা বল্ডিং তুলছিল। কিন্তু বিল্ডিংটা নদীতে ভাঙ্গা লইয়া গেল । এখন আমরা কোথায় যাই। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাতে রাতে থাকি। দিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। সরকার যদি আমাদের একটু সাহায্য করতো খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতাম।
মায়া বেগম বলেন ৪-৫ দিন আগে আমার বসত ঘর সরিয়ে নিয়েছি। খুব শখ করে অনেকগুলো মুরগি পালতাম। মুরগির খোয়ারটা এখানেই ছিল। আজ মুরগি আর খোয়ার দুইটাই বিক্রি করে গেলাম । নিজেদের থাকারই তো জায়গা নাই মুরগি পালবো কোথায়? ঘর ভেঙে নিয়ে অন্যস্থানে রাখছি। ভিটাটার মায়া ছাড়াতে পারিনা। রান্নাবান্না করি না ভিটায় এসে বসে থাকি। আলী মিয়া সৈয়াল বলেন, এই পর্যন্ত আমাদের সর্দার কান্দি ও শম্ভু হালদার কান্দি গ্রামের দুইশত ভিটেবাড়ি নদীতে ভাঙ্গা লইয়া গেছে। গত কয়েকদিনে মোখলেছ ,তাইজুল ইসলাম, হাতেম সৈয়াল কাজল সৈয়াল ,সাইফুল, আলেয়া ,ইমরান আশরাফ উদ্দিন, রাজাউল্লাহ ,আল আমিন, বিল্লাল ফকির, জসীমউদ্দীন, নান্নু, আমিন ,মোবারক, রাজ্জাক সরদার, সোলায়মান, কালু সৈয়াল , আবু কালাম, পাখি সৈয়াল ,শাহিন খান, আজিজ, মজিদ সৈয়াল, রেজাউল্লাহ, নয়া মিয়া, হরিছ সৈয়াল ,চম্পা বেগম, নাসির মাঝি, বাবুল মাঝির বসতভিটা নদী ভাইঙ্গা গেল। মানুষগুলো ঘরবাড়ি হারাইয়া এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি । শুকনো মৌসুমে ওই স্থানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে । এখন যেহেতু ওই এলাকায় তীব্র নদী ভাঙ্গছে আমরা গতকালও ওই এলাকায় গিয়েছিলাম পরিদর্শন করে এসেছি । বর্তমানে জিও ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলানো যায় কিনা আজকে বিকালে এ নিয়ে মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। মিটিংয়ে সম্মতি হলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই ওই স্থানে জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলানো শুরু করা হবে।
শুক্রবার দুপুরে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য এড.মৃণাল কান্তি দাস বলেন , নদী ভাঙ্গন রোধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে শীগগিরই। বসত ভিটা , ফসলী জমি রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার বিষয়ে কথা বলা হবে। সেই সাথে পদ্মার মাঝ নদীতে অবৈধ ভাবে বলু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন মুহাম্মদ আল জুনায়েদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য আমরা শুকনো খাবারের ব্যবস্থা গ্রহন করছি। শীঘ্রই তালিকা প্রকাশ করে আমরা তাদের সহযোগিতা প্রদান করবো।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL