মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে ভূট্টা আবাদ বেড়েছে। সাধারণত আলু উত্তোলনের পর উঁচু জমিগুলোতে যে সমস্ত জমিতে পানি দেরিতে আসে ওই সব জমিতে বিগত কয়েকবছর ধরে ভুট্টা চাষ করে আসছিল কৃষক। কিন্তু এ বছর ঘুর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে অনেক জমিতে আলু রোপন করা সম্ভব হয়নি। যে সমস্ত নিচু জমিগুলোতে আলু রোপন করতে পারেননি সে সমস্ত জমিতেও এবার ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষক। তবে আলু উত্তোলনের পরে রোপন করা জমিগুলোতে এ বছর হঠাৎ করে সিলেটের বন্যার পানি এসে পড়ায় কৃষকের অনেক ভূট্টা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চাষী জমি, এবং পদ্মার তীরবর্তী ও পদ্মার বুকে জেগে উঠা হাসাইল, বানারী, গারুরগাও, পাঁচগাও, দিঘীরপাড়, কামাড়খারা ইউনিয়নের চরগুলো ঘুরে দেখা যায় এ বছর ভূট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এদিকে ভূট্টার দামও বেশি। প্রতিমন ভূট্টা এখোন ১০০০ থেকে ১২০০ শত টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রখর রৌদ্রে কিষাণ কৃষাণী ফসল ঘরে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ফলন ভালো হওয়ায় এবং দামও বেশি থাকায় তাদের চোখে মুখে কেবলই তৃপ্তির হাসি।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও পদ্মার তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তপ্ত রোদের মধ্যেও কৃষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কেউ জমিতে ভুট্টার ছড়া সংগ্রহ করছেন কেউ আবার মরা পাতা পরিষ্কার করছেন। নতুন ফসল ঘরে তোলার নেশায় কৃষকের যেন দম ফেলার সময় নেই ।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে,এ বছর ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০০ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ৪১৭ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে এ বছর ভূট্টা আবাদ হয়েছে । ভুট্টার দাম আশানুরূপ ফলনও ভালো হয়েছে। একারণে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ভুট্টা আহরণের পর বাকি অংশ পশু খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কৃষকরা জানান, আলু উত্তোলন করার পরে আমরা আগে জমিগুলোতে বোরো আমন ধান রোপন করতাম। কিন্তু বন্যা প্রায়ই আমাদের রোপন করা ধান ভাসিয়ে নিয়ে যেতো। এছাড়া শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো আমন ধান রোপন করে লোকসান হয়। এজন্য ভূট্টা চাষ করতেছি। ভূট্টার দাম এখোন বেশ ভলো। এছাড়া ভূট্টা গাছ থেকে গরুর ভালো খাবার পাওয়া যায়।
চরাঞ্চলের লোকজন বলেন, অল্প খরচে বেশি ফসল পাওয়ায় ভুট্টা চরাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে ভুট্টা মাড়াইয়ের আধুনিক পদ্ধতি না জানায় লাভের অংশ অনেকটা কমে যায়। এখানকার উৎপাদিত ফসল জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
উপজেলার চাঠাতি পাড়া গ্রামের কৃষক হুময়ূন বলেন, এ বছর আলু রোপন মৌসুমে বৃষ্টির কারণে নিচু জমিগুলোতে আলু রোপন করতে পারিনি। পরে নিচু জমিতে ভুট্টা রোপন করেছিলাম। রোপনের পরে রোগ বালাই হয়েছিলো। এ অঞ্চলে ওষুধ পেয়ে রংপুর জেলা থেকে কিনে এনে জমিতে স্প্রে করেছি। পরে মোটামুটি ভালোই ফলন হয়েছে। দামও ভালো।
পাঁচগাঁও গ্রামের কৃষক আবদুল রহিম বলেন, ভুট্টাসহ বিভিন্ন সাথী ফসল চাষ করে থাকেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এবার ২৬ গন্ডা (১৮২ শতাংশ) জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। প্রতি গন্ডায় ৫- ৬ মণ করে ভুট্টা উৎপাদন হয়। প্রতি মণ ভুট্টার বাজার দর ১০০০-১২০০ টাকা। এ হিসেবে প্রতি গন্ডায় লাভ হয় ৩-৪ হাজার টাকা।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জয়নুল আলম তালুকদার বলেন, টঙ্গিবাড়ী কৃষি অফিস সবসময় ভূট্টা চাষিদের সু পরামর্শ দিয়ে আসছে। এ বছর সরকারী প্রনদনা হিসেবে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর ভুট্টার ফলনও ভাল হয়েছে।
তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, টঙ্গীবাড়ী কৃষি অফিস থেকে সরকারী ভাবে ভুট্টা মাড়াই এর আধুনিক যন্ত্র ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় করা হয়, আগ্রহী কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL