২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সারাদেশ

মৌসমী ফল ব্যবসায়ীদের বাড়তি আয়ে পরিবারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৬-২৬ ১৭:৫৩:১৫
...

কেউ বিক্রি করছেন আম, কাঁঠাল, কেউবা আনারস, লটকন, জামসহ নানা জাতের মৌসুমী ফল। হাট বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় মৌসুমী বিক্রেতারা ওইসব ফল বিক্রি করছেন । মধু মাসের ওইসব ফল খেতে নানা বয়সি লোকজন ও ক্রয় করছেন। এমন দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সর্বত্র হাট বাজারে দেখা যায় ।

এখন মধু মাস হওয়ায় ওইসব ফলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারদিক। ঘরে ঘরে চলছে এক প্রকার আনন্দ। পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের আনাগোনা ও ফল-ফলাদি আদান-প্রদান ও যেন চলছে পুরো দমে।

মৌসুমী ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে এর চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ। তবে মধু মাসের ফলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের এখন চলছে সুদিন। গাছ থেকে ফল কেনা আর বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর ফল বিক্রির মাধ্যমে উপজেলার শতাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী তাদের সংসারের খরচ মিটিয়ে বাড়তি আয়ে বেশ অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে।

ইতিমধ্যে উপজেলার সর্বত্র হাট বাজারসহ গ্রামাঞ্চলে ওইসব ফল বিক্রি জমে উঠেছে।

একাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী জানায়, তারা বছরের বেশী ভাগ সময় এলাকায় উৎপাদিত নানান ফল বিক্রি করে থাকেন। যে সময় ফল থাকে না তখন অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক বাজার গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী রাস্তার দু’পাশে আম, আনারস, কাঁঠাল, জাম,লটকনসহ নানা ফলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। ওইসব দোকানগুলোতে দেশি ফল হাতছানি দিচ্ছে এ উপজেলার মানুষকে। প্রকৃতির তাপে-গরমে হাঁস-ফাঁস অবস্থার মাঝেও রসনা তৃপ্ত করতে নানা পেশার লোকজন এসব বাহারি মৌসুমী ফল ক্রয় করছেন। দেশীয় ফলের আগমনে তাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতি পিচ কাঁঠাল নিচে ৩০ টাকা থেকে উপরে ২৫০ টাকা, ১ হালি আনারস ১৫০-২৫০ টাকা, আম প্রতিকেজি ৬০-১০০ টাকা, লটকন ৬০-৭০ টাকা, জাম ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

ফল বিক্রেতা সুমন সাহা বলেন, তার পরিবারে ৫ জন সদস্য রয়েছে। তিনি এক সময় শ্রমিকের কাজ করতেন। পরিশ্রমের কাজ করতে না পারায় গত প্রায় ৬ বছর ধরে ফল বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন এখন ফলের ভরা মৌসুম হওয়ায় নানা জাতের ফল পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেশী। গত ১ মাস ধরে তিনি মৌসুমী ফল আনারস ও আম বিক্রি করছেন। ওইসব ফল বিক্রি করে দৈনিক ৭শ থেকে ৮শ টাকা খরচ বাদে আয় হয় বলে জানায়। বছরের বেশীভাগ সময় তিনি ফল বিক্রি করে জীবিকা অর্জন করছেন।

লটকন বিক্রেতা মো. নূরুল আলম বলেন, এ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে লটকন সংগ্রহ করে গত প্রায় ১৫ ধরে তিনি বিক্রি করছেন । লটকন খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। এফল বিক্রি দৈনিক ৪শ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।

কাঁঠাল ব্যবসায়ী মো: মুছা মিয়া বলেন, পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছে। সংসারের খবর ও বেড়েছে। ভারি কাজ করতে তার কষ্ট হয়। তাই তিনি মৌসুম অনুযায়ী বছরের বেশীভাগ সময় নানা জাতের ফল বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন তার বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে ১০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সবকটি গাছে ভালো কাঁঠাল এসেছে। পাশাপাশি তিনি এ মৌসুমে অন্য জায়গা থেকে কাঁঠাল কিনে বাজারে বিক্রি করছেন। এখানে কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দৈনিক ৩০-৪০টি কাঁঠাল করা হয়। এ মৌসুমে দুই মাস কাঁঠাল বিক্রি করা যাবে। বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানায়।

ফল বিক্রেতা মো. ফারুক মিয়া জানান, এখন ফলের ভরা মৌসুম। তিন মাসের উপরে চলবে মধু মাসের চলবে ফল বিক্রি। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছের জাম ও লটকন সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন। অল্প পরিসরে জাম ও লটকন চাষ হওয়ায় বাজারে জামের কদর বেশ ভালো রয়েছে। দৈনিক ওইসব বিক্রি করে ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় হয় বলে জানায়। এ আয় দিয়ে চলছে তার সংসার।

মো. নাসির মিয়া বলেন, এক সময় তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। বয়স হওয়ায় এ কাজ করতে তার কষ্ট হয়। গত ৩ বছর ধরে তিনি দেশীয় ফল বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন গত ১ মাস ধরে লিচু বিক্রি করেছেন। এখন তিনি কাঁঠাল ও আম বিক্রি করছেন। এ মৌসুমে অন্য সময়ের তুলনায় ফল বিক্রিতে ভালো আয় হচ্ছে। বছরের বেশী ভাগ সময় ফল বিক্রির আয়ে তার জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে বলে জানায়।

গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন মৌসুমী ফল মেয়ের বাড়িতে দেওয়ার জন্য ২টা কাঁঠাল,২ হালি আনারস, ৫কেজি আম কেনা হয়।

মো. ফয়সাল মিয়া বলেন, বাজার এখন মৌসুমী ফলে ভরপুর। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য আম ও কাঁঠাল ক্রয় করে নেওয়ায় তারা খুবই খুশি হয়েছেন।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মৌসুমী ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এ উপজেলায় অনেকেই বানিজ্যিক ভাবে নানা প্রকার ফল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এ উপজেলার মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগি। এখানে আম ,লিচু, আনারস, কাঁঠাল,তাল শাঁস, জাম,লটকনসহ নানা প্রকারের ফল ভালো হয়। ফলন ভালো করতে সার্বিকভাবে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।