সৌখিন কৃষক মো. আজাদুল হক । মৌসুম অনুযায়ী সারা বছরই তিনি বাণিজ্যিকভাবে নিজস্ব জমিতে লাউ, বেগুন, তরমুজ, শাম্মাম, বরবটি, করলাসহ নানা ধরনের ফল ও সবজি আবাদ করছেন। তবে তিনি এক এক সময় নতুন নতুন জাতের সবজি ও ফল চাষে এলাকায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করছেন। এবার ও তিনি প্রথম বারের মতো লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ করে এলাকায় এক প্রকার বাজিমাত করেন। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ করছেন। অন্য সবুজ জাতের সবজির চেয়ে তিনি এ চাষে সময় ও তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় দ্বিগুন লাভের আশা করছেন। স্থানীয় বাজারে এর ভালো চাহিদা থাকা ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। কৃষক আজাদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামরে মৃত আব্দুল আলিম মিয়ার ছেলে।
এদিকে কৃষক আজাদুল হকের এই ব্যতিক্রমি লাল রঙের ঢেঁড়সের সৌন্দর্য দেখতে ইতিমধ্যে প্রতিদিন স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকজন এসে ভিড় করছেন। তাছাড়া বেকার যুবকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ঢেঁড়স একটি জনপ্রিয় সবজি হলে ও এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ ভিটামিন এ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোদের ক্ষমতা বাড়ায়। শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে। তাছাড়া লাল রঙের দেঁড়শ স্বাস্থ্যরে জন্য খুবই উপকারী। সাধারণ জাতের সবুজ ঢেঁড়শের তুলনায় লাল রঙের ঢেঁড়সের অনেক বেশী উপকারী। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্ররে সমস্যা বা কোলস্টেরেল বেশি রয়েছে তাদের শরীরের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। এছাড়া র্পযাপ্ত আয়োডিন, বিভিন্ন খনজি পর্দাথ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ সমারোহ। মাঝখানে লাল রঙের ঢেঁড়স। সবুজ জমিতে লাল রঙরে এ সব সবজি দেখে আগত লোকদের নজর কাড়ছে। পাশাপাশি রয়েছে সাদা আকৃতির বরবটি, করলা ও। সকাল বিকাল জমিতে পরিচর্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক আজাদুল হক।
কৃষক আজাদুল হক বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি প্রবাসে ছিলেন। গত ৪ প্রায় বছর আগে সেখান থেকে তিনি একেবারে দেশে চলে আসেন। এরপর তিনি অনেকটাই যেন বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ব গুছাতে চেষ্টা করেন কিছু একটা করতে। এরইমধ্যে ইউটিউব দেখে কৃষির প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পরীক্ষা মূলক ৪০ শতাংশ জায়গার মধ্যে লাউ বেগুন দিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। এতে করে সবজি চাষে শুরুতেই এক অভাবনীয় সাফল্য পান। প্রথম বছর সবজি চাষে খরচ বাদে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এর পর তার আগ্রহ কয়েকগুন বেড়ে যায়। পাশাপাশি জমির পরিমানও বাড়তে থাকে।
এখন তিনি সারা বছরই নানা রকম সবজি ও ফল আবাদ করছেন। এ বছর তিনি কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবাররে মতো লাল রঙের ঢেঁড়শ চাষ করেন। সম্পুর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ৪৫ শতাংশ জমিতে তিনি তাইওয়ানের রেডকুয়িং জাতের ১৫শ ঢেঁড়স চারা লাগিয়েছেন। জমি তৈরী, চারা বীজ কেনা, আবাদসহ এতে তার প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়।
চারা লাগানোর ৪০ দিনের মাথায় গাছে ফলন আসতে শুরু করে। গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় বাজারে ৮০ থেকে ১শ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন লাল ঢেঁড়স। এ পযর্ন্ত ৩ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাজারে এর কদর বেশ ভালো রয়েছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে জানায়। তিনি আরো বলেন এক একটি ঢেঁড়স গাছে নিচে ৩ থেকে ৪ কেজি ফলন পাওয়া যাবে। যেভাবে গাছে ফলন আসছে এতে খরচ বাদ ও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দ্বিগুন লাভের আশা করছেন তিনি।
নতুন জাতের এই ঢেঁড়স চাষ দেখতে আসা উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীরবাজার এলাকার মো: বাবুল মিয়া বলেন সাধারণত আমরা ছোট বেলা থেকেই সবুজ রঙের ঢেঁড়স দেখে আসছি । কৃষকরা ও সবুজ রঙের ঢেঁড়স চাষ করে থাকেন। আর ওই ঢেঁড়সই সব সময় আমরা খেয়ে আসছি। কিন্তু সহসায় লাল রঙের ঢেঁড়স চোখে পড়ছে না। এই প্রথম দেখে খুবই ভালো লাগছে।
কৃষক মো: মিলন মিয়া বলেন এই এলাকায় আজাদুল হকের আগে অন্য কেউ লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ ইতিপূর্বে করেছে কি না জানি না। আমিও দীর্ঘ বছর ধরে নানা জাতের সবজি করছি কিন্তু এ চাষ করেনি। লাল রঙের ঢেঁড়স চাষের খবর শুনে কয়েকবার এখানে দেখতে এসেছি এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানায়। সামনে এ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায়।
উপজলো কৃষি র্কমর্কতা শাহানা বেগম বলনে, এ উপজেলার উৎপাদিত সবজিও বিভিন্ন প্রকারের ফল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। মিশ্র ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন কৃষক আজাদুল হক একজন আদর্শ কৃষক। তিনি বছরজুড়ে নানা প্রকারের সবজি ও ফল চাষ করছেন। প্রথমবাররে মতো লাল রঙের ঢেঁড়স চাষে তিনি এক প্রকার চমক সৃষ্টি করেন। এখন পযর্ন্ত তার সবজির ফলন ভালো আছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে আশা করছি তিনি অন্য সবজির চাইতে লাভবান হবেন।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL