২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সারাদেশ

হাটে বিক্রি কম, চিন্তিত খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৭-০৩ ১১:৫৩:৪০
...

ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মুক্তার হোসেন এক বছর ধরে দেশি জাতের একটি ষাঁড় পুষে বড় করেছেন। আশা করেছিলেন, গরুটি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু বাজারে নেওয়ার পর দাম শুনে হতাশ তিনি। শনিবার কথা হয় ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের গরু বিক্রেতার মুক্তার হোসেনের সাথে।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ঈশ্বরদীর অরণকোলা পশুর হাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক গরু উঠলেও হাটে ক্রেতা কম। বিক্রেতার সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। এ হাটে দেশি-বিদেশি সকল জাতের গরু পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি এই হাটে গরু বিক্রি না হওয়ায় খামারিরা হাট থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্রেতাই গরু দেখছেন, দরদাম করছেন কিন্তু কিনছেন কম। ফলে চিন্তিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া খামারিরা। ক্রেতারা গরুর দাম বেশির অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন পশু খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হলেও গরুর দাম সেভাবে বাড়েনি। বেচাকেনা কম হলেও হাটে লোক সমাগম রয়েছে চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে হাট।

মঙ্গলবার দুপুরে অরণকোলা পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে বিভিন্ন আকারের পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাক, ভটভটি ও পাওয়ার ট্রলিতে শত শত গরু আসছে হাটে। বিশাল হাটের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত জুড়ে শুধু গরু আর গরু। ক্রেতারা পছন্দের গরু দেখছেন ও দরদাম করছেন। গরুর পাইকাররা গরুর সাইজ অনুসারে দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বলে অভিযোগ কয়েকজন ক্রেতাদের। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরকষাকষি ও বেচাকেনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে হাটের পরিবেশ।

গরু ব্যবসায়ী আলম মালিথা বলেন, স্থানীয় যারা কোরবানির পশু কিনবেন তারা অনেকেই গরু কেনার চেয়ে গরুর বাজারদর দেখতে এসেছেন। আবার বিক্রেতারাও এ হাটের চেয়ে আগামী হাটে বেশি দাম পাবেন এ আশায় বিক্রি করছেন না। তাই এ হাটে বেচাকেনা কিছুটা কম হয়েছে।

গাবতলি থেকে অরণকোলা হাটে গরু কিনতে আসা আমজাদ হোসেন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাজারদর কিছুটা বেশি। খাদ্যের দাম বেশি হলেও গরুর দাম সে তুলনায় বেশি হয়নি। তাই মানুষ তার সাধ্যের মধ্যেই কোরবানি দিতে পারবে। এ হাটে দেশি-বিদেশি সকল জাতের গরু পাওয়া যায়। সারাদেশের মানুষ এ হাটে এসে ন্যায্যমূল্যে গরু বেচাকেনা করতে পারে। সেজন্য সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে মানুষজন।

ঈশ্বরদীর অরণকোলা এলাকার গরু ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশের লোক এখানে গরু বেচাকেনা করতে আসে। বেচাকেনা যাই হোক হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠেছে। আমার কাছে এক লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে।

গরু কিনতে আসা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামের আকরাম আলী জানান, হাট ঘুরে দেখালাম এ হাটে ৫ মণ ওজনের একটি দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। বিদেশি জাতের ৫ মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া এ হাটে ৬০ হাজার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। আমি এখনো গরু কিনতে পারিনি। দেখছি, দাম সাধ্যের মধ্যে হলেই গরু কিনে ফেলবো।

হাটে গরু কিনতে আসা মিরকামারীর ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর গরুর দাম কিছুটা বেশি। ভেবেছিলাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী একটি গরু কিনবো। কিন্তু হাটে এসে দেখলাম গরুর দাম গতবারের তুলনায় বেশি। তাই বাজেট আরো বাড়াতে হবে।

অরণকোলা পশুর হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান রুনু মন্ডল বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরুর আমদানি হয়েছে। লোকসমাগমও বেশি। কিন্তু বেচাকেনা তুলনামূলক কম। হাটে গরু কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি। আশা করছি আগামী হাট থেকে বেচাকেনা আরো বাড়বে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ঈশ্বরদীতে এবছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। বন্যার কারণে হাটে গরু বেশি থাকলেও ক্রেতা কম। আশা করছি ঈদের আগে বিক্রি বাড়বে।