০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
Logo
স্বাস্থ্য

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেননি ৮০ ভাগ পোশাক শ্র‌মিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৯-০১ ১৮:৫২:১৩
...

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৭৪ দশ‌মিক ৩ শতাংশ শ্র‌মিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নি‌য়ে‌ছেন।  দ্বিতীয় ডোজ নি‌য়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্র‌মিক। তবে কেউ বুস্টার ডোজ নেন‌নি।  গতকাল বুধবার ‘সামপ্রতিক আরএম‌জি প্রবৃদ্ধি : উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থা‌পিত গ‌বেষণা প্র‌তি‌বেদ‌নে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।  বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ অনুষ্ঠা‌নের আ‌য়োজন ক‌রে।  যেখা‌নে প্রধান অ‌তি‌থি ছি‌লেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ সহসভাপতি শ‌হিদুল্লাহ আ‌জিম এবং বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হাতেমসহ এ খাতের শ্র‌মিক নেতা এবং শ্র‌মিক সং‌শ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা।  অনুষ্ঠা‌নে গ‌বেষণা প্র‌তি‌বেদন উপস্থা‌পন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। 

৫১টি পোশাক কারখানার ১২৪৪ জন শ্র‌মি‌কের ওপর এ জ‌রিপ প‌রিচা‌লিত হয়।  যেখা‌নে ৬০ শতাংশ নারী, আর ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্র‌মিক অংশ নেন। 

সি‌পি‌ডির প্র‌তি‌বেদ‌নে বলা হয়, করোনাকালীন তৈ‌রি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ‌য়ে‌ছে।  ত‌বে ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে।  যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল। 

প্র‌তি‌বেদ‌নের তথ্য অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই।   ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে।  ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই। 

জ‌রি‌পে উ‌ঠে এসে‌ছে প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসাবে দিতে হয়েছে, যা অবৈধ। 

তৈরি পোশাক শিল্পের ক‌রোনার টিকা প্রস‌ঙ্গে প্র‌তি‌বেদ‌নে বলা হয়, ৭৪ দশ‌মিক ৩ শতাংশ শ্র‌মিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।  দ্বিতীয় ডোজ নি‌য়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্র‌মিক।  যা‌দের ওপর জ‌রিপ করা হয় তারা কেউ বুস্টার ডোজ নেন‌নি। 

শ্র‌মিক‌দের টিকা নেওয়ার বিষয়ে কারখানার মালিকপক্ষ ও খাত সংশ্লিষ্টরা ব‌লেন, শ্রমিকদের টিকা নিতে গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে, এত সময় ব্যয় করে তারা টিকা নিতে আগ্রহ হয় না।  তাই করোনাকালীন সময়ে সরকারি যেভা‌বে উদ্যোগে নি‌য়ে প্রথম ডোজ দি‌য়েছিল, সেটা চলমান রেখে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। 

দে‌শে এক হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউ‌নিয়ন আ‌ছে।  আস‌লে কি ট্রেড ইউ‌নিয়নে শ্র‌মিক‌দের কো‌নো উপকার হ‌চ্ছে এটা নিয়ে গ‌বেষণা করা দরকার? ট্রেড ইউ‌নিয়নের কাজ শুধু আ‌ন্দোলন নয়, শ্র‌মিক মা‌লিকের ম‌ধ্যে সমন্বয় করা।  কিন্তু আমা‌দের এখা‌নে তা হয় না। কারখানার শ্র‌মিকরা‌ নিজ উ‌দ্যো‌গে ট্রেড ইউ‌নিয়ন ক‌রেন না।‌  বা‌ইরের লোকজন এটা ক‌রে দি‌চ্ছে ব‌লে অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন মা‌লিক পক্ষ।  

কারখানায় নারী শ্র‌মিক ক‌মে যাওয়ার যু‌ক্তি হিসেবে মা‌লিক‌দের দা‌বি যন্ত্রের ব্যবহার যত বাড়‌বে শ্রমিক তত কমবে।  এখন মে‌শিন চালা‌তে হ‌লে দক্ষতার দরকার হয়।  বে‌শিরভাগ নারী শ্র‌মিকের এ‌ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব র‌য়ে‌ছে।  তাই নারী শ্র‌মিক ক‌মছে। নারী‌দের ধ‌রে রাখতে হ‌লে দক্ষতা বাড়া‌তে হ‌বে। 

ত‌বে শ্র‌মিক নেতারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব শ্র‌মিক ট্রেড ইউ‌নিয়নের উ‌দ্যোগ নি‌য়ে‌ছে তা‌দেরই চাক‌রি হারা‌তে হ‌য়ে‌ছে। 

মাতৃত্বকালীন ছু‌টিতে বৈষম্যের অ‌ভি‌যোগ ক‌রে শ্র‌মিকরা জানান, সরকা‌রি অ‌ফি‌সে মাতৃত্বকালীন ছু‌টি ৬ মাস।  এছাড়া কাগ‌জে কল‌মে মাতৃত্বকালীন ছু‌টির কথা থাক‌লেও তা বে‌শিরভাগ শ্র‌মিক পান না।  অনেকক্ষে‌ত্রে মাতৃত্বকালীন ছু‌টি নয়, চাক‌রি ছে‌ড়ে দিতে হয়। 

শ্র‌মিক নেতারা আ‌রো ব‌লেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।  শ্রমিকের জীবনে সংকট বাড়ছে।  ৪ বছর আগে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে।  মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি বাড়ানোর কথা এখনো সরকার বিবেচনা করছে না।  যতদ্রুত সম্ভব মজুরি বাড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়ি‌য়ে‌ছে। 

সরকা‌রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৩ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১১ জন।  এছাড়া দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ১২ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৪ জন মানুষ।  আর এখন পর্যন্ত বুস্টার ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯ জন।