২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
স্বাস্থ্য

পানি স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন

তরিকুল ইসলাম সুমন
প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২২ ১৬:৩৭:৫৪
...

হাওরবাসীর জীবনমানে আসছে পরিবর্তন

হাওরবাসীর নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। হাওর বেষ্টিত ৭ জেলার (সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নেত্রেকোনা) ৮ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর এলাকার ৩৩৭টি হাওরের অধিকাংশ মানুষ পানির মধ্যে বসবাস করলেও দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সমস্যায় ভুগছেন। এ সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সোহরাব উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আকস্মিক বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব এলাকার মানুষ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভালো হাইজিন বা পরিচ্ছন্নতার অভাবে তারা আমাশয়, ডায়েরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে ‘হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হলে এসব এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও সানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন হবে জীবনমানের।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, হাওরবাসীর নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যা ছিল দীর্ঘদিনের। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে হাওর বেষ্টিত ৭ জেলার ৫০ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আসবে। এছাড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে টেকসই প্রযুক্তি প্রবর্তন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাওড় ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টার প্ল্যান (ভলিউম-২) অনুযায়ী হাওড় এলাকায় ৫০ শতাংশ পরিবার পারিবারিক ব্যবহারের জন্য পার্শ্ববর্তী নদী বা পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ জনগণের নিরাপদ পানি স¤পর্কে ধারণা নেই। হাওর অঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবারের লোকজন ডায়রিয়ায় ভুগেছিলেন। এছাড়া এ অঞ্চলের জনগণ বিভিন্ন সময়ে আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড ও পানিবাহিত সাধারণ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ কারণে হাওড় অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার কাজ চলছে।

সোহরাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আকস্মিক বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাওর অঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদান একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। প্রকল্পের মাধ্যমে এ সেক্টরে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় ও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নকৃত স্থাপনাসমূহ কোনো প্রকল্পের আওতায় কখন করা হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড বা অন্য কোনো সুবিধাজনক ব্যবস্থায় চিহ্নিতকরণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ডিপিএইচই কর্তৃক হস্তান্তরকৃত স্থাপনাসমূহ উপকারভোগী কমিটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এ জন্য এলাকাবাসীদের এনজিওদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চলতি অর্থ বৎসরে এডিপি-এর প্রায় ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। জানুয়ারী ২০২৪ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ভৌত- ৮৫.৮০ শতাংশ, আর্থিক ৭৮.৯০ শতাংশ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮ হাজার ৩০৩টি নলকূপের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ২৫ হাজার ৫৫৭টি, ৪ হাজার ৫৮৪টি ল্যাট্রিনের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭টি। বাকিগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থাপন কাজ শেষ হবে। এসব কাজ শেষে হলে ৭ জেলার ৫০ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আসবে।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন বিষয়ে স্থানীয় জনগণের সচেতন করা হয়েছে, গভীর নলকূপ মডিফাইড সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ স্থাপন ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সহায়তা, পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাইজিন প্রমোশনের জন্য প্রচারণার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পাকা টয়লেটও স্থাপন করা হয়েছে।

/মামুন