২৩-নভেম্বর-২০২৪
২৩-নভেম্বর-২০২৪
Logo
চট্রগ্রাম

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার আশংকায় আতংকে এলাকাবাসী

প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-১৯ ১৭:০৬:২৯
...

লক্ষ্মীপুর :
লক্ষ্মীপুর চররমনী মোহন ইউনিয়নের কাদিরাগোঁজা টু করাতিরহাট ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি এলজিইডির কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ হিসেবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। মূল কাঠামো থেকে খসে পড়ছে ব্রীজের পলেস্তার ও খোয়ার ডালাই। অতিরিক্ত লবণাক্ততাসহ নানা সংকটে ব্রিজের অবস্থা এখন জীর্ণশীর্ণ। ব্রিজের প্রত্যেকটি পিলার, গ্রেটবীম, লিন্টার ফাটল ধরে ভেঙ্গে পড়ছে। ব্রিজটির ছাদে নীচের আংশ খসে পড়ে রডগুলো দৃশ্যমান। কিছুদিন আগে ব্রীজের কয়েকটি স্থানে বড় বড় অংশ ভেঙ্গে পড়ায় বিভিন্ন সময় নিজ অর্থায়নে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ সৈয়াল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ কামরুল সরকার ব্রীজটি সংস্কার করে দেয়।

ভেঙ্গে পড়েছে দু'পাশের রেলিং দৃর্শ্যত ব্রিজটি এখন কঙ্কালসার অবস্থা। স্থানীয়রা এটিকে ভাঙ্গা ব্রীজ নামে চিনেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই ব্রিজটি দিয়ে চলাচল করছেন এ জনপদের অন্তত চারটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। যে কোন সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে বড় ধরনের প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলজিইডির কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেয় এবং সকল ধরণের যানবাহন চলাচল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। একটি কুচক্রী মহল ওই সাইনবোর্ডটি খুলিয়ে নেয়।
প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজের ওপার থেকে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিষিদ্ধ ট্যাক্টরে বহন করে স্থানীয় ইকবাল মিয়ার ব্রীক ফিল্ডসহ পার্শবর্তী কয়েকটি ইটবাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে। ইটবোঝাই, মাল বোঝাই বালি ভর্তি পিক-আপ, পাওয়ার টিলার সহ ছোট-বড় যানবাহন ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করছে। ইউনিয়নের উৎপাদিত হাজার হাজার টন সয়াবিন ও ধান বাজারজাত করতে এ ব্রীজটি ব্যবহার করছে।

সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্রিজটি তাদের একমাত্র ভরসা। তবে মূল অবকাঠামো হারিয়ে ব্রিজটি এখন রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখনো এলাকাবাসীর অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় প্রাণঘাতি দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করেনএখানকার স্থানীয়রা।

চররমনীমোহন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মি. জাজ করাতি জানান, আমাদের চলাচলের জন্য ব্রিজটি একমাত্র ভরসা। ইট, সয়াবিন, ধান, অন্যান্য মাল ভর্তি ট্রাক, মাটিভর্তি পাওয়ারটিলা চলাচল বন্ধ না করলে ব্রিজ ধসে পড়ে চরম দূর্ভোগের শিকার হবে এ জনপদের মানুষ। অচিরেই এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন এবং ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরী।

অটো রিক্সা চালক জানান, গাড়ী উঠলে ব্রিজে কম্পন হয়। কিছুদিন আগে ভেঙ্গে গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হলে কামরুল মেম্বার সংস্কার করে দেয়। তিনি বলেন, এখন ইটবাটার ইকবাল কোম্পানী পাওয়ার টিলার দিয়ে মাটি নেওয়ার কারণে আবার ভেঙ্গে গেলে তো ইকবাল কোম্পানী ঠিক করবেনা।

ব্রিজের পাশে চা দোকানী জানান, আমাদের এখানে ব্রিজ ওপর দিয়ে লোড গাড়ী যাতায়াত করায় ধসে পড়ে যেকোন সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে। এটি ভেঙ্গে নতুন একটি ব্রিজের দাবী জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

ব্রিজের ওপার থেকে মাটিভর্তি পাওয়ারটিলার চালক জানান, এ মাটিগুলো ইকবাল হুজুরের ইটের বাটায় নেওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।

এলজিইডির লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জানান, ব্রীজটি ইতোমধ্যে সাপোর্টিং রুরাল ব্রীজ প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব নতুন ব্রীজ করা হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর ২০নং চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবু ইউসুফ সৈয়াল জানান, ব্রীজটি অত্যন্ত পুরানো। বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। চলাচলের উপযোগী করতে বিভিন্ন সময় নিজ অর্থায়নে সংস্কার করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে প্রাণহানি আশংকা করছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নতুন ব্রীজ নির্মানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জরুরী ভিত্তিতে এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কামরুল সরকার জানান, ব্রীজটি যেকোন মুহুর্তের ধ্বসে যেতে পারে এতে প্রাণহানি ঘটতে পারে। নতুন ব্রীজ নির্মাণের জন্য তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট নূর উদ্দীন চৌধুরী নয়ন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন।