বেকারদের জন্য নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশের বেকার সমস্যা উন্নয়নের গতিপথে অন্তরায়। কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের মাত্রা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে এসব উচ্চশিক্ষিত তরুণ কর্মসংকটের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ২৯ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে সরকার। সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন বছরে প্রতিদিন ৫০০ টাকা জনপ্রতি ভাতা দিয়ে ৪৮ জেলায় কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ।
দেশের বেকারদের কর্মমুখী করতে সরকারের এই উদ্যোগ অতি উত্তম। তবে সূচনায় এই উদ্যোগের পরিসর ক্ষুদ্র মনে হতেই পারে। এটা ঠিক যে, বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং করার নানা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের রোজগারমুখী করতে হলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ফ্রিল্যান্সিং ফার্মগুলোতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এরমধ্যে দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত অনেক প্রতিষ্ঠান বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ফার্মগুলোতে যুক্ত করে বিদেশি মুদ্রা উপার্জন করছে। বাসায় কিংবা কোনো দেশীয় ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানের যুক্ত হয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক বেকার ২০ হাজার থেকে শুরু করে মাসে লাখ টাকা পর্যন্ত রোজগার করছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে এই কর্মতৎপরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
কেবল আইসিটিতে দক্ষ করে তুলে অনেক কম্পিউটার জানা যুবক-যুবতী নিজেদের বেকারত্ব দূর করছে। দেরিতে হলেও সরকারের এই খাতটিকে নজর পড়েছে। এ প্রকল্পের পরিসরও তুলনামূলকভাবে সীমিত। তিন বছরে মাত্র ২৯ হাজার যুবককে তৈরি করা অনেকের কাছে খুব বড় উদ্যোগ মনে নাও হতে পারে। যেখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে লাখ লাখ বেকার এই খাতে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। দেশ উপার্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রা।
এই খাত নিয়ে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে। আইসিটি খাতে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের এই বিষয়ে সক্রিয় করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কর্মক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশি যুবকদের কী করে আরো সংশ্লিষ্ট করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে এই প্রকল্পে দক্ষ প্রশিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে বেকারদের দক্ষ করে তুলতে হবে।
এতে এই খাতটি যেমন অধিক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তেমন দেশ থেকে দূর হবে বেকারত্ব। সে সঙ্গে এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আরেকটি সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে পরিগণিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে আরো গতি আনতে হলে, এই ফ্রিল্যান্সিং খাতের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া দরকার। তাহলে শুধু বেকারত্বই দূর হবে তা নয়, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আরেকটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমরা আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL