পাচারকারীদের শনাক্ত করুন
দেশের অর্থনীতির জন্য টাকা পাচার এক বড় সমস্যা। উপার্জিত অর্থ যেখানে দেশের উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার কথা, সেখানে টাকা ডলারের রূপান্তরিত হয়ে বিদেশি ব্যাংকে সঞ্চয় হচ্ছে। এতে দেশের উন্নয়ন তো হচ্ছেই না, উল্টো ডলারের রিজার্ভে শূন্যতা সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে দুর্বল করা হচ্ছে।
দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদ শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘৫০ বছরে পাচার ১২ লাখ কোটি টাকা, বছরে পাচার ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার’ আর অর্থ পাচারে শীর্ষ দেশের তালিকায় ৩০টির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
প্রতি বছরই দেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি ঘুরেফিরে আসে। আর গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না এর ধারাবাহিকতা। গত ৫০ বছরের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এমন বাস্তবতা নজরে আসে। বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, শিল্পপতি এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন আসতে পারে, তারা কেন দেশ থেকে অর্থ পাচার করে দিচ্ছেন?
ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানির নামে এবং অন্যরা বৈধ-অবৈধ উভয় নামে অর্থ পাচার করেন। অনেকের প্রশ্ন, কোনো কোনো বিত্তশালীর মধ্যে কেন এই প্রবণতা? অর্থ পাচারকারীদের বেশির ভাগেরই ইচ্ছা উন্নত দেশে বিলাসি জীবনযাপন। তারা নিজের দেশের চেয়ে বাইরে অর্থ সঞ্চয়কে বেশি নিরাপদ মনে করেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে তারা অর্থ সঞ্চয়ে নিজেদের দেশকে নিরাপদ না ভাবতে পেরে বাইরে পাচারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
অনেক পাচারকারী, দুবাই, লন্ডনসহ আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে গাড়ি-বাড়ি কিনে দ্বিতীয় আবাসস্থল গড়ছেন। অনেকে ওই সব দেশে শিল্প-বাণিজ্য গড়ে তুলছেন। এতে আমাদের দেশের অর্থনীতি দিনের পর দিন দুর্বল হচ্ছে। যে অর্থ দেশে বিনিয়োগ হওয়ার কথা, শিল্প-কারখানা গড়তে ব্যয় হওয়ার কথা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ার কথা, সেখানে তা না হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি না এসে স্থবিরতা নেমে আসছে।
দেশের অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফেরাতে হলে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের নিরাপদ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার- সেই দিকে নজর দিতে হবে। আর পাচার করা অর্থের আরেকটা অংশ, যা বিদেশি ব্যাংকে সঞ্চিত, সেই কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে আইনি সংস্কার করতে হবে।
ধীরে ধীরে আলোচনায় আসছে, কারা, কোন দেশে অর্থ পাচার করছেন। তাদের একটি তালিকা তৈরি করার কথা হবে, কোন দেশে, কত টাকা, কে পাচার করেছেন- এটা জাতিকে জানাতে হবে? তাদের বছরওয়ারি তালিকা তৈরি করে প্রকাশ করার নিয়ম করা যায় কি না, তা সরকারকে ভাবতে হবে।
আমরা মনে করি, বছরের পর বছর এই অর্থ পাচার কান্ড চলতে পারে না। এদেশে রোজগার করবে আর সঞ্চয় করবে বিদেশে, তা হতে পারে না। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অর্থ নিয়ে সরকারকে এখনই একটা যৌক্তিক সমাধানের চিন্তা করতে হবে। তা না হলে, এই গতি অব্যাহত থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন পিছিয়ে যাবে।
আমরা মনে করি, আর কাল বিলম্ব না করে সরকার অর্থ পাচারের বিষয়ে এখনই একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসবে- যেন অর্থ পাচার রুখে দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে আসে নতুন গতি।
/মামুন
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL