২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে, সহনীয় করতে হবে পণ্যমূল্য

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-১৫ ১৯:৩৮:৪৭
...

দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে সরকারি মহল ইতিপূর্বে খুব একটা কথা বলেনি। যতটুকু বলেছে, তাতে দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে বেশি স্পষ্টতা ছিল না। বরং দ্রব্যমূল্যের কারসাজির জন্য দায়ী সিন্ডিকেটগুলোর বিষয়ে সরকারের এক মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দেশে ক্রাইসিস তৈরি হবে।’ মনে করা হয়, এভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে অভ্যন্তরীণভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহকারী ও মজুদদাররা দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন সংকটকে আরো ঘনীভূত করে নিজেরাই মাত্রাহীন দ্রব্যমূল্য সৃষ্টি করেছে। যা-ই হোক বিলম্ব হলেও সরকারপ্রধান দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

যেখানে বহুমুখী কারণে একটার পর একটা পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগামী হয়েছে, সেখানে ইচ্ছা করলেই রাতারাতি ঊর্ধ্বমূল্য কমানো সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক, সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আন্তর্জাতিক কারণগুলোর সমাধান না করতে পারলেও দেশীয় কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল। আস্তে আস্তে বিশ্বের অন্যান্য দেশ পণ্যমূল্য নাগালের মধ্যে আনলেও বাংলাদেশ কিন্তু সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো যদি সরকার প্রতিরোধে নীরব না থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতো, তাহলে পণ্যমূল্য এ পর্যায়ে এসে দাঁড়াত না।

বর্তমানে চিনির মূল্য প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। গত বছর একই সময়ে দর ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ২০২১ সালে ছিল ৬০ টাকা। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালে আসতে যদি পণ্যমূল্য দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে এই পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক নয়। সেখানে এই পণ্যের মূল্য সহনীয় করতে আমদানিতে সরকারি যে কর হ্রাস করা হয়েছে, তা কেজিতে ৬৮ পয়সা। তিন বছরে ধাপে ধাপে অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোতে যদি সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তাহলে পণ্যের মূল্য কমবে কীভাবে?

সংবাদ সূত্র মতে, ১০টি সবজির দাম গতবারের চেয়ে ১৫ থেকে ১০০ শতাংশ বেশি। পথে পথে সবজি বহনকারী ট্রাকে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, সবজির মূল্যকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মাঠে কৃষকরা সবজির যে মূল্য পান, তার চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে রাজধানীতে বিক্রি করতে হয় ব্যবসায়ীদের; যা কোনো পণ্য উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

উৎপাদন এলাকা পাবনা ও ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ১১০ টাকা উঠেছে। এ পেঁয়াজ তিন বছর আগে ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হতো। সেই পেঁয়াজ বছরখানেক আগেও ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কৃষকদের উপযুক্ত মূল্য দিতে যখন পেঁয়াজ আমদানি করা বন্ধ হলো, তখন থেকে পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুরু। পরে আমদানি করা শুরু হলেও মূল্য আর কমেনি। এরপর আমদানি করা বন্ধ হলে পেঁয়াজ আর আগের মূল্যে ফিরে যেতে পারেনি। এখন তিন বছর আগের চেয়ে চার গুণ মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

এবার শুধু চিনি, সবজি, পেঁয়াজ নয়- প্রতিটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক অবস্থান নিয়ে গণমানুষের কাঁধে চেপে বসে আছে। তুলনামূলকভাবে আশপাশের দেশগুলোতে পণ্যমূল্য কমলেও আমাদের দেশে কমেনি। চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, উচ্চ শুল্কহার, ডলারের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি- এসব কারণকে মাথায় রেখে একটি সমন্বিত রূপরেখা তৈরি করা ছাড়া পণ্যমূল্য নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, দেশে সুষম উন্নয়ন করতে হলে পণ্যমূল্যকে অবশ্যই সহনীয় করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে দেশ।

 

/এ মামুন