২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

যানজট নিরসনে করণীয়

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১২-১১ ২০:০৩:৩৬
...

রাজধানী শহর ঢাকায় যানজট একটি বড় সমস্যা। অর্থনীতিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। উন্নয়নের গতি থমকে যাচ্ছে। সব জেনেও নগরবাসী অসহায়। মেগা সিটি ঢাকার জনসংখ্যা এখন প্রায় আড়াই কোটি। প্রতিদিন যানজটে ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।
যানজট নিরসনে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ধাপে ধাপে ২০৩৫ পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা চলবে। বর্ধিত আকারে মেট্রোরেল ও বাস র্যাপিড ট্র্যানজিট হয়েছে। এরমধ্যে সড়কের উন্নয়নে নগরীতে এবং আশপাশের অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ইনার, মিডল ও আউটার সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। আটটি রিজিওনাল সড়কের কাজও চলমান। আর মেট্রোরেল থাকবে-সাভার-গাবতলী পর্যন্ত। যদিও মিরপুর দিয়ে মতিঝিল চালু হয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত কাজ চলছে। পরে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাবে।
যানজট নিয়ে নগরবাসীর যে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। অপরিকল্পিত নগরে যেভাবে জনসংখ্যা ও যানবাহন বেড়েছে, সে তুলনায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। মূল শহরে অনেক শিল্প-কারখানা, কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন নগরজীবনে যোগ করেছে বাড়তি চাপ। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পের লাখ লাখ কর্মী রাজধানী শহরের গার্মেন্টসে কর্মরত। কারখানাগুলো রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করলে জনজটের সঙ্গে যানজট নিরসনেও এর প্রভাব পড়তো। রাজধানীকেন্দ্রিক অনেক অফিস আছে, যেগুলোকে বিভাগীয় শহর কিংবা রাজধানীর বাইরে সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তরের আলাপ-আলোচনা আগেও শোনা গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং সমস্যা দিন দিন বেড়েছে। যানজট নিরসনে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যানজটের অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে প্রাইভেটকার। কোনো কোনো পরিবারে তিন-চারটি গাড়ি। রাস্তায় প্রায় দেখা যায় একটি গাড়িতে চালক আর মাত্র একজন যাত্রী। অন্যদিকে দিনে রাস্তায় নামছে নতুন ২০০-৩০০ প্রাইভেটকার। প্রাইভেটকারের এতো চাহিদা যে, পোর্টে নামার আগেই আমদানিকারকরা ক্যাটালগ দেখিয়ে বিক্রি করে দেন। একজন মানুষের গাড়ি কেনার সামর্থ্য হলেই কোনো বিধিবিধান না থাকায় মার্কেট থেকে গাড়ি কিনে নিতে পারে। তার গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, নাগরিক স্ট্যাটাস কতটুকু- এটাও বিবেচনার নীতি নেই। অনেক দেশে এসব বিবেচ্য বিষয়। আর আমাদের দেশে এমন আইনি বিষয় নেই বলে অহরহ নতুন কেনা গাড়ির চাপটা গিয়ে পড়ে রাস্তায়।
ঢাকা এখন বিশে^র তৃতীয় যানজটের শহর। আগামী ১৫-২০ বছরে রাজধানীতে ৫৫ শতাংশ জনসংখ্যা বাড়বে। যাতায়াত বাড়বে ৭১ শতাংশ। যানজটের তীব্রতা দিগুণ হবে। তখন ভবিষ্যৎ নগরীর রাস্তার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- এটা চিন্তার বিষয়? যেমন প্রাইভেটকার, রিকশা চলাচল হ্রাস করা; তেমন দরকার শিল্প-কলকারখানা মূল রাজধানী থেকে স্থানান্তর করা। সেই সঙ্গে দরকার সড়ক উন্নয়ন ও মেট্রোরেলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন। এছাড়া আগামী দিনের ঢাকা হবে আরো দুর্ভোগপূর্ণ। একটি রাজধানীকে জনবান্ধব করতে হলে বহুমুখী উন্নয়ন চিন্তা যেমন করতে হয়, তেমনি সমস্যার সমাধানে পরিবর্তন আনতে হয়। যানজট নিরসনে সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে তা সময়ের বিচারে খুবই উপযোগী। এর বাস্তবায়ন সফলভাবে করতে হবে।
একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। যানজট সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এর ফলে বিমুখ হয়ে যায় বিদেশি বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ না হলে বেকারত্ব কমবে না বরং বাড়বে দারিদ্র্যের মাত্রা। সব মিলিয়ে যানজটের সঙ্গে উন্নয়নের নিবিড় সর্ম্পক। যানজটের জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টির আগে পরিকল্পনা দরকার ছিল আরো আগে। বিগত সরকারগুলোর সময়ই যানজট নিরসনে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল। সরকারের যানজট দূরীকরণে নেয়া দুটি পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনামাফিক সড়ক উন্নয়ন ও মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগই যানজট নিরসনের একমাত্র পথ। দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গৃহীত উদ্যোগ আগামী দিনে নগরবাসী যানজটের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে- এ আমাদের প্রত্যাশা।