২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

রাজনীতি যখন বিরাজনীতিকরণের খপ্পরে

প্রকাশিতঃ ২০২১-০২-১৬ ০৪:০০:২৮
...

 বিএনপি-জামায়াতের বাইরে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই—অলিখিত কিন্তু বহুল চর্চিত একটি বয়ান। মূল এ বয়ানকে শক্তিশালী করতে আবার দেওয়া হয় ‘ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুন’তত্ত্ব। এ তত্ত্বের আওতায় নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা পরিবর্তনের ধারাকে পুরোপুরি বন্ধ রাখার নতুন নতুন বয়ানও হাজির করা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, তারুণ্যকে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায় নিতে পারলেই কেল্লা ফতে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান, জীবনমানের অর্থবহ উন্নয়ন, নাগরিক জীবনে স্বস্তি, স্বাস্থ্যে সুরক্ষা, শিক্ষা, আবাসন, পরিবহন খাতে বোধগম্য উন্নতি, নাগরিক নিরাপত্তা, প্রাণ ও পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন করা না গেলে চাপিয়ে দেওয়া কোনো রাজনৈতিক বয়ানই বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যায় না। আমাদের তরুণেরা দীর্ঘ বেকারত্বের জ্বলন্ত উনুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে। তাই চাওয়া–পাওয়ার হিসাব চাইতে শুরু করেছে তারুণ্য। বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়ে গেছে। চারদিকে তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাগাদা।


একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সব সময় বিকল্প থাকে না, বিকল্প তৈরি করে নিতে হয়। এ বিকল্প তৈরি করাটাও বুদ্ধিজীবীদের একটা দায়িত্ব। বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসগুলো সব সময় ‘আগে থেকেই বর্তমান’ বিকল্পকেন্দ্রিক ছিল না। বরং জনস্বার্থকেন্দ্রিক দাবিদাওয়া, চাওয়া–পাওয়ার পরিপক্বতা, রাষ্ট্রসংস্কার কাঠামোর নতুন লক্ষ্য, রাজনীতি মানুষকে কী দেবে, নেতারা মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবেন—এসব বোঝাপড়া মিলেই তৈরি হয় একেকটা রাজনৈতিক বিকল্প। 


জবাবদিহিহীন কর্তৃত্বপরায়ণ রাজনীতির বিরুদ্ধে নাগরিক জাগরণ শুরু হলে তার আচরণ ও চরিত্র, নতুন রাষ্ট্রনৈতিক লক্ষ্য ও গন্তব্যগুলোর নাগরিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে আর অতীত ব্যর্থতার আলোকে তৈরি হবে নতুন নেতা। এ পথ বন্ধের ফল হয় অশুভ। ত্বরান্বিত হয় অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ, ক্ষমতাবলয়ের অভিজাতের বিপরীতে উদ্ভব হয় পাল্টা সুবিধাবাদী এলিট কিংবা তৃতীয় শক্তি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসও এ চক্রের বাইরে নয়। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রবর্তনের সংগ্রামের মধ্যেই বের করে আনতে হবে বিকল্প। অন্যথায় রেজিম পরিবর্তন হলেও নতুন গজিয়ে ওঠা অভিজাত ও দুর্বৃত্তদের স্বার্থচিন্তার কাছে আবারও হারিয়ে যাবে মানবিক রাষ্ট্র গড়ার আকাঙ্ক্ষা।