০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

সুবর্ণচরে আবারো পাশবিকতা

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-০৮ ২০:১৭:১২
...

দ্রুত বিচার করতে হবে

কয়েক দিন আগে সুবর্ণচরের ধর্ষণ মামলায় যুগান্তকারী রায় জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। ওই ঘটনাটি ছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে। ওই ঘটনা ঘটানো হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সূত্রে। ওই মামলার রায় ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই আবারো একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। এবারও এক মাকে ধর্ষণ করা হয়েছে একই দলের রাজনৈতিক কর্মী কর্তৃক। তাছাড়া এবার শুধু মাকে ধর্ষণ করে ক্ষ্যান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা সঙ্গে ওই মায়ের তরুণী কন্যাকেও ধর্ষণ করা হয়েছে।

দেশে ধর্ষকদের শাস্তি দিতে আইনি কঠোরতা রয়েছে ধর্ষণের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ২০১৮ সালের ধর্ষণ ঘটনায় দশ জনের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সুবর্ণচর উপজেলায় আবারো যে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটল, তা দেশবাসীকে পুনরায় হতবাক করেছে। যে উপজেলায় বছর পাঁচেক আগে একটি সঙ্ঘবদ্ধ নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল, সেই উপজেলায় আবারো একই কায়দায় একইভাবে একই দলের রাজনৈতিক সদস্য কর্তৃক এক মা ও সঙ্গে মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। প্রমাণিত হয়েছে, ধর্ষকদের শক্তি রাজনৈতিক। আবার কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী কর্তৃক স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এবং স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর জন্য কে দায়ী? আমরা কি রাজনৈতিক ধারাকেই এই সব পাশবিক ঘটনার জন্য দায়ী করব? না, বিষয় সেটা নয়। কোনো দলের আদর্শই নেতিবাচক নয়। সব দলই নিজ নিজ আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে, রাজনৈতিক শক্তির দম্ভে যারা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে অবৈধভাবে রাজনৈতিক ছায়া সুরক্ষিত করে কি না? যদি রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেয়া হয়, তাহলে তারা আইনিপ্রক্রিয়াকে দুর্বল করে আইনের ফাঁকফোকর পেরিয়ে স্বল্প সময় বেরিয়ে যাবে।

সুবর্ণচরের আগের ঘটনার রায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক স্রোতধারা কুলুষিত করেনি। যদি তাই হতো তাহলে অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যেত। এখন দেখার পালা, সুবর্ণচর উপজেলায় ৫ ফেব্রুয়ারি যে ঘটনাটি ঘটল তার বিচারপ্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হয় কি না? তবে এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, আইনের শাসন আপন গতিতে চলছে। তার প্রমাণ সুবর্ণচরের ২০১৮ সালের ঘটনার মামলার রায়। এখন দেখার পালা সুবর্ণচরের পরের ঘটনায় কী শাস্তি হয়?

শান্তির সমাজ দেশে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অবশ্যই জরুরি। বিশেষ করে জনগণের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলোর আইনিপ্রক্রিয়া দ্রুত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে সাধারণ জনগণ স্বস্তি পায়। দেশও সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যায়।

সুবর্ণচরের নতুন ঘটনা আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা দেশজুড়ে এখন আলোচিত বিষয়। এই ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলো যেমন তোলপাড় সৃষ্টি করে, তেমনি এসব মামলার রায়ের ন্যায্যতা মানুষের মনে আলোড়ন তোলে। ঘটনায় যেমন মানুষ হতবিহ্বল হয়, তেমন সন্তোষজনক রায়ের স্বস্তি প্রকাশ করে। ঘটনার কারণে ক্ষমতাসীনদের যেমন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, সুষ্ঠু রায়ে তেমন হারানো ভাবমূর্তি ফিরে আসে।

আর যা-ই হোক, সুবর্ণচরের নতুন ঘটনা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা- এ সময় বেশ মর্মবেদনার কারণ হয়ে আছে। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ে মামলা দুটির আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি হবে। যেন এরপর আর কোনো দুর্বৃত্ত রাজনীতি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেদের জঘন্য কর্মকাণ্ডকে ঢেকে দিতে না পারে। আমরাও প্রত্যাশা করি তাই।