নিজস্ব প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ :
পাহাড়ি ঢল হাওরবাসীর জন্য অভিশাপ। সর্বনাশা এই ঢলে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল বিনষ্ট হওয়ার সঙ্গে মানুষও হয়ে পড়েন জলবন্দি। হাওরবাসীকে পাহাড়ি ঢলের বিপদ থেকে রক্ষায় তৈরি করা হচ্ছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ। কিন্তু উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, দেখার হাওরে এই বাঁধ তৈরি হচ্ছে বালুমাটি দিয়ে।
ফলে এই হাওরের ১২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়বে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের পুটিয়া নদী ও মহাসিং নদীর সংযোগস্থলে ৮নং উপ-প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)র সভাপতি ও বর্তমান ইউপি সদস্য রোপন মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক এনামুল কবির এনাম। এ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে বালু মাটি দিয়ে মাটির কাজ স¤পন্ন করেছেন তারা। দ্রুত এই বালুর বাঁধ ভেঙে নতুন করে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বালির বাঁধের কারণে এবছর দেখার হাওরের ১২ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের পুটিয়া নদী ও মহাসিং নদীর সংযোগস্থলে ৮নং উপ-প্রকল্পের প্রকল্পের ৪৭০ মিটার বাঁধের ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজের অধিকাংশ স্থানে বালি মাটি দিয়ে কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুটিয়া নদী ও মহাসিং নদীর সংযোগস্থলে বিপজ্জনক জায়গায় স¤পূর্ণ বাঁধ বালু মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
কোনো কোনো স্থানে বালু মাটিতে পা ফেললেই পা গেড়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে এটেল মাটিও রয়েছে। এ বাঁধটিতে কোন দুর্মোচ মারা হয়নি। এসময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রোপন মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, এখানে বালু মাটি আছে। কাজের ফিনিসিংয়ের জন্য সামান্য বালি মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই তারা বালু মাটি দিয়েই কাজ শেষ করছেন। কিছু কিছু জায়গায় এটেল মাটিও রয়েছে। পাশাপাশি বাঁধের ¯ে¬াপে ঘাস লাগানোর পরিবর্তে ছন লাগিয়েছেন এবং বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে বাঁশ দিয়ে আড় নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আগাম বৃষ্টি হলে বালি মাটির এ বাঁধটি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, পুটিয়া নদী ও মহাসিং নদীর সংযোগস্থলে ৮নং উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৭০ মিটার কাজে এ বছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৪৬ টাকা। পিআইসি দায়িত্বশীলরা বাঁধের অধিকাংশ জায়গায় বালু মাটি দিয়ে স¤পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যেভাবে হাওর রক্ষা বাঁধ বালু মাটি দিয়ে করা হচ্ছে। এরকম বাঁধ নির্মাণ হলে বর্ষার এক সপ্তাহের বৃষ্টিতেই ভেঙে যাবে বাঁধ। তাতে এই বাঁধ হাওরের কোন কাজে আসবে না। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কর্তৃপক্ষ যেন দায়সারাভাবে কাজ করাচ্ছেন। বাঁধের কাজ সঠিকভাবে করতে হলে এখানে জিও টেক্সটাইল ছাড়া এই বাঁধগুলো টিকবে না। বাঁধের কাজে সরকারের টাকাই ব্যয় হবে কিন্তু ফসলরক্ষার কাজে আসবে না।
পিআইসি কমিটির লোকজন নিজেরা লাভবান হতে দায়সারাভাবে কাজ করছেন। আমরা এই হাওরের অনেক কষ্টের ফসল লাগিয়েছি। বৃষ্টি এলে বাঁধটি যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও), উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ইয়াছিন খাঁনের মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, কোথাও বালি মাটির বাঁধ মেনে নেয়া হবে না। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই বাঁধ থেকে দ্রুতই বালি মাটি অপসারণ করা হবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL