অবরোধ-হরতালে যানবাহনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতি সাধন করা হয়। জনমনে ভীতি সৃষ্টির অভিপ্রায়ে এ ধরনের ক্ষতির উৎসবে মেতে ওঠে দুর্বৃত্তরা। সাধারণত এই অগ্নি-সন্ত্রাস করানো হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গত ২৪ দিনের হরতাল-অবরোধে ১৮৫টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮টি বাস, ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে।
যানবাহনগুলোতে আগুন দেওয়ার কারণ রাজনৈতিক। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এই অগ্নিসন্ত্রাস। কোটি কোটি টাকার যানবাহন পুড়ছে রাজনৈতিক এই অপসংস্কৃতিতে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব যানবাহনে আগুন দিচ্ছে কে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি যানবাহনে আগুন দিয়ে হরতাল-অবরোধ সফল করে সরকার হটাতে চাইছে। বিএনপি বলছে, সরকার পক্ষ যানবাহনে আগুন দিয়ে মামলা সৃষ্টি করে বিএনপির কর্মসূচি নস্যাৎ করতে চাইছে। যাতে পুলিশ ও আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাবন্দি করে যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি স্তব্ধ করা যায়। আর এই সুযোগে আবার পাঁচ বছর ক্ষমতাকে নির্বিঘ্ন করা যায়।
পক্ষ-বিপক্ষের এই অভিযোগ প্রায় দেড় যুগ ধরে চলছে। জনসাধারণ এই চিত্র দেখে আগে থেকে অভ্যস্ত। কিন্তু ক্ষমতা বদলের এই সব লড়াইয়ে সর্বনাশ হচ্ছে মানুষের।
হরতাল-অবরোধে একশ্রেণির মালিক রাজপথে গণপরিবহন বের করতে নির্দেশ দেন না। পুড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে তাদের এই সতর্কতা। এ কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান থাকলে শহর এলাকায় যানবাহন আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। আবার আরেক শ্রেণির মালিক অবরোধের মাঝেও যানবাহন চালাতে উৎসাহ বোধ করেন। বলা যায়, অনেকটা রাজনৈতিক কারণে তাদের এই উৎসাহ বোধ।
এর আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোর প্রাক্কালে হরতাল-অবরোধে পুড়ে যাওয়া গাড়ির মালিকদের সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ নিতে দেখা গেছে। যার সংবাদ সেই সময় গণমাধ্যমে এসেছে।
আর যা-ই হোক হরতাল-অবরোধে নানান ভীতির কারণে রাস্তায় যেমন যানবাহন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়, তেমন জন-চলাচলও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসে। মাঝখানে দুর্ভোগে পড়ে নিত্যদিনের পথচলা মানুষ, শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অফিসগামী চাকরিজীবীরা। পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচল কমে যায়। যাও-বা চলাচল করে, তার ভাড়াও বেড়ে যায় আপত্তিকর মাত্রায়। আর এই অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা চেপে বসে পণ্যমূল্যের ওপর; যা বহন করতে হয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে। ফলে যানবাহন পোড়ানোর জ¦লন্ত আগুনের চিত্র বাহ্যিক চোখে দেখা গেলেও এর অন্য পৃষ্ঠার অদেখা রূপ বোধসম্পন্ন মানুষের অনুভবে থেকে যায়- তারা ভাবেন কী হচ্ছে দেশে; আরো থাকে জনগণের অনুমানের জগতে। কিন্তু শেষমেশ ভোগান্তিটা পোহাতে হয় আম-জনতাকেই। কোন দল ক্ষমতায় যাবে আর কোন দল ক্ষমতায় যাবে না, তা নির্ধারণের দায়িত্ব যদি স্বাভাবিক মাত্রার গণতন্ত্র অনুযায়ী হতো তাহলে রাজনৈতিক কর্মসূচির এই রহশ্যঘেরা চিত্র জনগণকে অবলোকন করতে হতো না। ভোগান্তি পোহাতে হতো না সব শ্রেণিপেশার কর্মজীবীকে।
রাজনীতিকে আনতে হবে স্বচ্ছধারায়। আর পাঁচটা গণতান্ত্রিক দেশের মতো। গণতন্ত্রকে সূতিকাগারে হত্যা করে মৌখিক গণতন্ত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন সম্ভব কিন্তু সুসম উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন- এসব একই সমান্তরাল পথে হাত ধরাধরি করে বিচরণ করে। যা দলীয় ও সংকীর্ণ দৃষ্ঠিভঙ্গির বাইরে। আমাদের এই বর্ণচোরা গণতান্ত্রিক পথ থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃত ধারা অনুসরণ করা উচিত।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL