সরাসরি প্রভাব পণ্যমূল্যের ওপর
আমাদের দেশের চাঁদাবাজি অপরাধ জগতে পুরোনো ধরন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চাঁদাবাজির প্রবণতা সামান্য মনে হলেও এর প্রতিক্রিয়া গভীর। চাঁদাবাজির প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। দৈনিক দিন পরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদ শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘চাঁদাবাজির কারণে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম’। সংবাদ ভাষ্যমতে, রাজধানী ঢাকার ছয়টি স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদাবাজিকালে র্যাব হাতেনাতে ৫১ জনকে আটক করেছে। কাওরানবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড়, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, কাজলা, গাবতলী ও ডেমরা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বর্তমানে ঊচ্চ পণ্যমূল্যের বাজারে এই ধরনের সংবাদ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি- যখন পণ্যমূল্যকে আরো ওপরে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, তখন চাঁদাবাজি পণ্যমূল্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে। কারা চাঁদাবাজি করে, কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি হয়, কী পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা বিস্তারিত সংবাদে উঠে এসেছে। এ সংবাদটিতে এটাই প্রমাণিত হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, প্রতিটি স্থানে যারা চাঁদাবাজি করছে, তাদের হাতেনাতে ধরাও সম্ভব। র্যাব এটা প্রমাণ করে দিয়েছে।
এ তো গেল রাজধানীকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির কথা। গ্রাম পর্যায় থেকে রাজধানীতে একটি পণ্যবাহী ট্রাককে ঢুকতে ১৭ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এমন সংবাদও পত্রিকায় এসেছে। যেখানে রাজধানীতে চাঁদাবাজদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব হয়েছে, সেখানে সারা দেশে কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি হয় তা র্যাব-পুলিশ সবাই জানে। একসময় মাংস ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মাংসের দাম অর্ধেকে নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু কেউ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। সন্ত্রাসীদের পুরোনো পেশা হিসেবে চাঁদাবাজি এখনো চলমান। শুধু কি তাই, চাঁদাবাজির আছে আরো গভীরতা।
বড় বড় চাঁদাবাজরা বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসিক চাঁদা নিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কোনো ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তাদের দুর্দান্ত ক্ষমতা প্রকাশ করে নিজেদের কুখ্যাত সন্ত্রাসী তালিকায় নিয়ে গেছে- এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ এখনো বিদ্যমান। কোনো কোনো এলাকায় পুলিশের নামেও চাঁদাবাজি চলে।
প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি স্বীকার করে সচিবদের এক সভায় বলেছেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ চাঁদাবাজি। তাই এ বিষয়ে শক্ত ব্যবস্থা নিতে তিনি সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নানা ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। তার সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে পণ্যমূল্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন পণ্যের যে দাম তা পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের পণ্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ ওই দেশগুলোতে পরিবহনে চাঁদাবাজি নেই; যা আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। মাঠে একজন কৃষক কৃষিপণ্য উৎপাদন করে যে মূল্য পান, তার চেয়ে দুই গুণ মূল্যে রাজধানীতে একজন ক্রেতাকে একই পণ্য কিনতে হয়। এটার একমাত্র বড় কারণ চাঁদাবাজি। বর্তমান সরকার যদি আইনের শাসনে কৃতিত্ব দেখাতে পারে তাহলে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গণমানুষের জীবনে নেমে আসবে স্বস্তি। শুধু উন্নয়ন হলো, বিশ্বের নানা সূচকে দেশকে এগিয়ে নেয়া হলো, কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেল না, তাহলে উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হয়েও মানুষ প্রশান্তি লাভ করবে না এবং এটাই বর্তমানে সত্য হিসেবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিলম্ব হলেও বিষয়টিতে নজর দিয়েছেন। সারা দেশে এই তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলে অচিরে এই পণ্যমূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ পণ্যমূল্য কমাতে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL