২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-০৬ ২০:২৯:০৪
...

উচ্চ বিদ্যাপীঠে এ কোন পাশবিকতা


বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ আদর্শের ভিত্তিভূমি। নৈতিকতা, মানবিকতা, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের মতো মানবিক গুণাবলী এসব প্রতিষ্ঠানে লালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে প্রবলমাত্রায় এর ভীত গড়ে ওঠে। এ কারণে জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়কেই একমাত্র জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে এখনো ধরা হয়, ভবিষ্যতেও তাই মনে করা হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যদি মানুষ সম্ভ্রম হারায়, তাও আবার শিক্ষার্থীদের হাতে, তাহলে এই কষ্ট মানুষ কোথায় রাখবে?


বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশসেরা মেধাবীদের বিদ্যাপীঠে যখন শিক্ষার্থী কর্তৃক নারীধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, তখন আর ক্ষোভ রাখার জায়গা থাকে না। আর যদি হয় স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে গণধর্ষণ, তাহলে মানুষের মনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।


সাধারণত এই ধরনের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারাই সম্পৃক্ত হয়। তারা ক্ষমতার শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে এই ধরনের বর্বর ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে তারা আইনিপ্রক্রিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে যাবতীয় অপরাধ ঢেকে ফেলে। একসময় অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিচরণ করে। সবই হয় ওপরের ক্ষমতাধর বড় ভাইদের আশীর্বাদে।


স্বনামে ধন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা কিন্তু গতানুগতিক ধারায় প্রক্রিয়াবদ্ধ করা হচ্ছে। জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, নিয়মমাফিক মামলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করেছে, পুলিশ কর্তৃক অভিযুক্ত আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কথা সেটা নয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সবই নিয়মনীতির ধারাবাহিকতা। অতীতেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর শেষের পর্যায়গুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সময়ের পরিক্রমায় সব অপরাধী আইনের ফাঁক গলিয়ে মুক্তি পেয়ে যায়। আবার তারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো প্রকৃতির আলো-বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। কখনো কখনো তাদের রাজনীতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।


আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যারা জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উপযুক্ত হতে মেধার পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে প্রবেশ করে, তারা যদি কলুষিত হয়ে যায়, তাহলে তাদের অবশ্যই আইনি ধারায় উপযুক্ত শাস্তি দেয়া উচিত। কিন্তু কেন তাদের গ্রহণযাগ্য শাস্তি দেয়া হয় না? কেন তারা আবার সদর্পে বিচরণ করে? একজন অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়াও তো আরেকটা অপরাধ। এই অপরাধ করা হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে। সমাজে অপরাধীরা যদি উপযুক্ত শাস্তি না পায় তাহলে সুষ্ঠু সমাজ, উন্নত রাষ্ট্র কীভাবে গড়ে উঠবে?


অপরাধীকে অপরাধীর মতোই দেখা উচিত আর আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। অভিযুক্তদের কখনই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। জাহাঙ্গীরনগরের এই পাশবিক ঘটনায় দায়িদের উপযুক্ত শাস্তি মানুষ প্রত্যাশা করে। কোনোভাবেই যেন অপরাধীরা প্রশ্রয় না পায়, সেদিকে দায়িত্বশীলদের নজর রাখতে হবে। তাহলেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে নিরাপদ করা যাবে। বিশ^বিদ্যালয়ে লালন করা যাবে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের।