দেশে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান:
তৃণমূলে দেশে স্বাস্থ্যসেবা কী পর্যায়ে রয়েছে, একটি সংবাদ পড়লে তা অনুমান করা যায়। গতকালের দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া চলছে সহস্রাধিক হাসপাতাল। সংবাদে তথ্য দেয়া হয়েছে, দেশের লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৩টি। আর লাইসেন্সবিহীন হচ্ছে ১ হাজার ২৭টি। সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের খাতনা করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় করা রিটে হাইকোর্ট এক আদেশ দেন। সেই আদেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর এই পরিসংখ্যান উঠে আসে।
দেশের বেসরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা যে অত্যন্ত নাজুক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গণমানুষের স্বাস্থ্যসংকটকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে হাজারো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্যও অর্থ রোজগার করা। যেভাবেই হোক রোগাক্রান্ত মানুষকে সংগ্রহ করে তাদের দুর্বলতার সুযোগে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই মূল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য যদি হতো রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়িয়ে চিকিৎসাসেবাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এবং পিছিয়ে পড়া স্বাস্থ্য খাতকে সরকারের সঙ্গে আরো এগিয়ে নেয়া- তাহলে কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে উপার্জন করা হচ্ছে অর্থ। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা ওত পেতে থাকেন কখন একজন রোগী আসবে, রোগী এলেই তার সুচিকিৎসার পরিবর্তে টাকার অঙ্কে বিলটা কত বড় করা যায়, সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন।
এই চিত্র দেশের সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে লাইসেন্সধারী অনেক বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। রোগীরাও আস্থাশীল হয়ে সেই সব প্রতিষ্ঠানে ভিড় করছেন সেবার অভিপ্রায়ে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও হার মানাচ্ছে। রাজধানীকেন্দ্রিক অনেক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিচ্ছে। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থা না রাখতে পেরে অনেক রোগী প্রতিবেশী এক রাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। ভিসা সেন্টারে লাইন দেখে এটা অনুভব করা যায়, কী পরিমাণ রোগী বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যাচ্ছে। আর ফিরে এসে তাদের ভূয়শী প্রশংসা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন দেশে এই অব্যবস্থাপনা? সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সঠিক তদারকি না হওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য খাত সুসংহত রূপ লাভ করেনি। বিশেষ করে বেসরকারি চিকিৎসাসেবাকে সুগঠিত করতে যে উদ্যোগ প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে করা হচ্ছে না। এ কারণে লাইসেন্সবিহীন মানহীন সেবাপ্রতিষ্ঠান বেড়ে গেছে। রোগীরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। অবশেষে দেখা যায়, দায়িত্বহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের ব্যবধানে মুক্ত হয়ে আবার মানহীন চিকিৎসা ব্যবসায় ফিরে যায়। এভাবে শিথিলতা দেখানোর কারণে বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাও জবাবদিহিমূলক হয়ে ওঠেনি। শুধু শিশু আয়ানের ক্ষেত্রে নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বহু মানহীন প্রতিষ্ঠান এভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। রোগীরা মারা গেলে হামলা-ভাঙচুর হয়, এরপর চলমান সময়ের একপর্যায়ে সব স্থিমিত হয়ে যায়। মানুষ ভুলে যায় সব অতীত।
স্বাস্থ্যসেবাকে এভাবে বিশৃঙ্খলতায় রেখে দেশের উন্নয়ন গতিশীল হবে না। সুষম উন্নয়ন করতে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণ করে আস্থার জায়গায় আনতে হবে। জনগণকে দেশমুখী স্বাস্থ্যসেবায় ফেরাতে হবে। তাহলে এই দেশের অর্থ দেশেই থাকবে। জনগণ সুস্বাস্থ্য নিয়ে দেশের সেবা করতে পারবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL