মিলছে না আয়ের সঙ্গে ব্যয়
শহরে জীবনে বাড়ি ভাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশির ভাগ শহরে কর্মজীবী মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাদের আয় থেকে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। বছর বছর বাড়ি ভাড়া বাড়ানো এর মূল কারণ।
দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, বাড়তি বাড়ি ভাড়ার চাপে দিশেহারা মানুষ। বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশে বাড়ি ভাড়ার এই বৃদ্ধি ঘটেছে।
বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি এবারই কেবল ঘটেনি। এর আগেরবারও বেড়েছে। আগের বছর ২০২২ সালে একই সময়ে ভাড়া বেড়েছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের এক সূচকে।
একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয়ের বিপরীতে যদি প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বাড়ে, আর ওই পরিবারে রোজগারের পরিসীমা যদি সীমিত পর্যায়ের হয়, তাহলে তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। দেশে গত দুই বছর ধরে এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যমূল্যের দাম দিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অবস্থা নাকাল হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে তারা কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছেন না। সেখানে যদি প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বাড়ে, তাহলে শহুরে জীবনে কর্মজীবীরা কীভাবে টিকে থাকবেন? একজন মানুষের যদি রোজগারের সীমাবদ্ধতার মাঝে মাত্রাতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া বাড়ে, তাহলে তারা নিরূপায় হয়ে কর্মপেশা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য। আর যারা কোনো রকমে ঠিকে থাকেন তাহলে তাদের অবস্থা হয় আরো শোচনীয়। ২০২০ সালের করোনা-পরবর্তী সময় থেকে এই অবস্থার সূচনা। তা এখন অবধি চলমান।
এক গবেষণার তথ্য মতে, একটি পরিবারের মোট আয়ের ১৪ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ায় ব্যয় হয়। তাই যদি হয়, তাহলে ওই পরিবার অন্যান্য খরচ নির্বাহ করবে কীভাবে? খাদ্যপণ্য- বিশেষ করে চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে বাচ্চাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচ, চিকিৎসা ব্যয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল মেটাতেই তো রোজগারের টাকা প্রায় শেষ হয়ে যায়। সেখানে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বাড়তি চাপ উপার্জনের কঠিন পর্যায়ে নিয়ে যায় শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কী করে নিস্তার পাবে নিম্ন আয়ের এসব পরিবার। তাদের জীবনযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে তো একটা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা থাকা দরকার। এই জন্য বাড়িওয়ালারা যেন প্রতি বছর ইচ্ছা করলেই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিতে না পারে, তার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ি ভাড়ার নির্দিষ্ট একটা নীতিমালা আছে। কিন্তু এর কার্যকারিতা কম। বাড়িওয়ালারা ইচ্ছমতো বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করেন। ভাড়াটিয়ারা তাই মেনে নিতে বাধ্য হন। রাজস্ব বিভাগের লোকজন এলেও তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে এড়িয়ে যান। প্রয়োজনে স্থানীয় থানার সঙ্গে সমন্বিত ব্যবস্থায় বাড়ি ভাড়ায় শৃঙ্খলা আনা যেতে পারে। যেন কোনো অজুহাতেই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিতে না পারেন তারা।
আমরা আশা করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেবেন, যেন বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া উভয় স্তরের মানুষ বিপর্যয়ে না পড়ে। সমাজের সুশৃঙ্খল অবস্থাই রাষ্ট্রের এগিয়ে চলার দীপ্ত নিশান।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL