জনবহুল রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করছেন জাতিকে। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য জাতির প্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়।
সংবাদ ভাষ্য মতে, গত দুই মাসে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে ৩৪টি ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে একই এলাকায় ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে ১৪১টি। বলা হচ্ছে, এসব ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ইঙ্গিত দিচ্ছে সামনে আরো বড় মাত্রার ভূমিকম্পের। তখন বিপর্যয় সামাল দেয়া হবে মুশকিল। প্রাণহানি ঘটবে ব্যাপক।
ভূমিকম্প হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগের পূর্ব ঘটনা থেকে আগাম ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। ইঙ্গিত না পাওয়ার ফলে আগাম প্রস্তুতির কথাও চিন্তা করা যায় না। তবে ঘটনা পরম্পরা বিবেচনায় আশঙ্কা করা যায়, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটে যেতে পারে। ঘটনার উদ্ভব হলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা থেকে উত্তরণের পথ এখন থেকেই সন্ধান করতে হবে। তা না হলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হতবাক হয়ে দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকা শক্তিশালী ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মিজোরাম, মণিপুর. মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকা এই ঝুঁকির আওতাভুক্ত। এছাড়া কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণের এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটেনিক প্লেটের সংযোগ স্থল। এই দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে মিয়ানমার প্লেট ও পশ্চিমে ইনডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের ওপরের ভাগটি লকট হয়ে আছে। এর মধ্যে পড়ে সুনামগঞ্জ, মনিপুর ও মিজোরাম।
কথা হলো, এই এলাকাগুলোয় শত বছরেরও কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। তাই উল্লিখিত এলাকার প্লেটে দীর্ঘদিন সঞ্চিত শক্তি জমে আছে। যার কারণে যে কোনো সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, বড় ভূমিকম্প আঘাত হানলে রাজধানী ঢাকার প্রায় দুই লাখ ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখা দেবে মানবিক বিপর্যয়। সমগ্র ঢাকা মৃত্যুর নগরীতে পরিণত হবে। শত তৎপরতা চালিয়েও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
মাত্র কিছুদিন আগে সিরিয়াসংলগ্ন তুরস্কে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে গেল। বিশে^র বিভিন্ন দেশ সহযোগিতায় এগিয়ে এলেও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উপযুক্ত তৎপরতা চালানো যায়নি। বিপর্যয়ের পরিণতি এত ভয়ংকর ছিল যে, বহু দালানকোঠার নিচে হাজারো মানুষের আত্মচিৎকার আস্তে আস্তে থেমে গিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের উদ্ধার করা যায়নি। সেই সব ধ্বংসস্তূপ আজও সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর প্রদত্ত শত রকমের আধুনিক প্রযুক্তি-সহযোগিতা তেমন কোনো উপকারে আসেনি।
আমাদের রাজধানী ঢাকারও একই রকম অবস্থার হতে পারে। সম্ভাব্য ভয়ংকর পরিণতি এড়াতে এখন থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকায় জাতি ব্যাপক মাত্রার ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারে।
আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ এড়াতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে এখন থেকে প্রস্তুতির পরিকল্পনা রাখতে হবে। প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহে করতে হবে। যেন দুর্যোগকালে জাতিকে প্রবল সংকটে পড়তে না হয়।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL