দিন পরিবর্তন ডেস্ক
দৈনন্দিন জীবনে অনেক পণ্য আমরা ব্যবহার করি, যা স্বাস্থ্যের জন্য অধিক মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। আধুনিক জীবনব্যবস্থায় এই শিল্পজাত পণ্যগুলো মানুষের জীবনে মিশে যাচ্ছে। এতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ভোক্তাদের জীবন। বিশেষ করে টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশ ও শ্যাম্পোয় ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্যারাবেন।
গতকালের দৈনিক দিনপরিবর্তনে প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশ। সংবাদটি খুবই উদ্বেগজনক। জীবনযাত্রাকে সহজ ও পরিচ্ছন্ন করতে ব্যবহার করা হয় এই সব পণ্য। সেই পণ্যই যদি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে মানুষ কেন সেই সব পণ্য ব্যবহার করবে?
ওই সংবাদের একাংশে বলা হয়েছে, দেশে তৈরি টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশ ও শ্যাম্পোতে মাত্রাতিরিক্ত বিউটাইল প্যারাবেন, মিথাইল প্যারাবেন পাওয়া গেছে। এই রাসায়নিকগুলো মানুষের হরমোন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করে ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
এই পণ্যগুলোতে আরো পাওয়া গেছে সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড- যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্টোক ও কিডনির ক্ষতিসাধন করে। টুথপেস্টের ফ্লোরাইড দাঁতের এনামেল গঠনে সমস্যা সৃষ্টি করে আর ব্যাহত করে হাড়ের গঠনপ্রক্রিয়া। আর এই সব উপাদান পাওয়া গেছে দেশে তৈরি পণ্যগুলোতে। বিদেশি পণ্যে এসব উপাদান গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। তবে প্যারাবেনের ঝুঁকি নিশ্চিত হয়ে এর ব্যবহার উন্নত দেশগুলোতে একেবারেই নিষিদ্ধ।
দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের পরিবেশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এ গবেষণা পরিচালনা করে।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে পণ্য গণমানুষের জীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য উৎপাদিত, সেই পণ্য যদি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই সে পণ্যকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রস্তুত করা দরকার। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো পণ্য ব্যবহারের জন্য সহজ করে দেয়া উচিত নয়। উন্নত দেশগুলো যেখানে প্যারাবেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে কেন? এজন্য এর দায় শিল্পপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হবে। হয়তো কৌশলগত কারণে গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুটি দেশি পণ্যগুলোর নাম ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করেনি। কিন্তু মানুষ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন করতে তথ্যগুলো জানিয়ে দিয়েছে। এই উদ্যোগের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুটি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
আমরা মনে করি, ক্ষতিকর রাসায়নিক প্যারাবেন অচিরেই দেশে শিল্পপণ্যে ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ও ফ্লোরাইডের ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে আনতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো পণ্য বাজারজাত করতে দেয়া উচিত হবে না। এজন্য পণ্যভিত্তিক ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করে সরকারকেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে।
/মামুন
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL