০৩-অক্টোবর-২০২৪
০৩-অক্টোবর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

মার্চের সিঁড়ি বেয়ে এসেছিল স্বাধীনতা

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২১-০৩-০৩ ১৬:৩৯:৫১
...

আজ ইংরেজি মাসের তৃতীয় মাস। শুরু হলো বাঙালির স্বাধীনতা ও গৌরবগাথার মাস। এটি বাঙালির স্বাধীনতার অগ্নিঝরা ইতিহাস। আবার বিষাদ ও বেদনার মাসও এই মার্চ। অগ্নিঝরা এই মার্চ আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে, থাকবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের জন্মের ইতিহাসে কোনো কোনো মাস বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকে হৃদয় ও ভৌগোলিক মানচিত্রে। আজীবন সেই মাসের কথা মনে করে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে জাতি। ইতিহাসের পাতায় অঙ্কিত থাকে ঘটনাবহুল সেই মাসের নাম। তাই বাঙালির হৃদয়ে মার্চের ভূমিকা ঠিক তাই। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে সৃষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে। প্রতিটি স্মরণীয় দিনই ইতিহাসের অংশ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ববাহী। বাঙালির জীবনে মার্চ এক অগ্নিঝরা মার্চ এ কারণে যে, এই মাসেই আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির স্বাধীনতার জন্য ২৩ বছরের নিরন্তর সংগ্রামের পর যখন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেও বাঙালির হাতে তাদের শাসনভার পাননি। নানা টালবহানার শিকারে নিপতিত হচ্ছে বাংলার মানুষ, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমাদের স্বাধীনতা ছাড়া আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই সামনে। তখন এই মার্চেই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ১৯ মিনিটের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে। সোহ্রাওয়ার্দি উদ্যানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জনসমাবেশে তিনি বলেছিলেনÑ“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এই বাণীর ভেতর দিয়েই তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, আমাদের স্বাধীনতাই এখন একমাত্র মুক্তি। আর তা অর্জন করতে হলে যুদ্ধই অনিবর্জ। তখনই তিনি ভাষণের মধ্যে ঘোষণা করলেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীনতার কথা। জাতির পিতার সেদিনের সেই ভাষণই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল বাঙালিদের। তিনি আরও বলেছিলেনÑ তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমাদের যুদ্ধেই যেতে হবে। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকেই লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য, যার নাম বাংলাদেশ। বাঙালির জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারি। এর পরের মাসই মার্চ। এই মার্চের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়েছিল এই মার্চেই। এ মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিন্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উত্তাল একাত্তরে পুরো মার্চ মাস জুড়েই বাঙালির চোখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন।

আজকের এই দিনে অর্থাৎ পয়লা মার্চে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের সাধারণ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই গর্জে উঠে পুরো দেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ  সেদিন স্লোগান তুলেছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।

মার্চ মাসেই বাঙ্গালি জাতি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করেছে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়েছে। স্বাধীনতা-পূর্ব সময়কালের অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতি বছরই আমাদের নতুন করে পথ নেওয়ার জন্য জাগিয়ে তোলে। আমরা আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের সেই বীর শহীদদের, যারা স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে তাদের মূল্যবান জীবন দান করে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন এবং নয় মাসের শসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা হাতে এনে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই মার্চের সিঁড়ি বেয়েই আমরা অর্জন করেছি হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স¦াধীনতা।এই স্বাধীনতা যাঁর নের্তৃত্বে এসেছিল সেই জাতির পিতাও মার্চের ১৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং মার্চ আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে মিশে আছে, থাকবে।