মোবারক হোসেন
রাজধানী শহরে ইটপাথরের দালানকোঠার মাঝে কত বাসাবাড়ি। এসব বাড়িতে লাখো মানুষের বসবাস। কত রকমের তৈজষপত্রের ব্যবহার সেসব বাড়িতে। কিন্তু প্রকৃতির অঙ্গ মাটির টানে গ্রামে বাস করা অনেকে এখন এই শহরের বাসিন্দা। এদেরই অনেকে এক সময় মাটির তৈরি নানান বাসনকোসন ব্যবহার করতেন। পেশাগত কারণে অনেককে ছাড়তে হয়েছে গ্রাম, পড়তে হয়েছে আধুনিকতার মহাগহ্বরে, শহরে বাঁধতে হয়ে আস্তানা। আর মাটির সেসব সামগ্রী প্রায় হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে।
শহরের রাজপথে যান্ত্রিক যানে চড়ে ব্যস্ত মানুষের হরদম ছোটাছুটি। এর মাঝে মাটির তৈরি জিনিষপত্রে ভরা ঠেলাগাড়িতে অনেকের চোখ আটকে যেতে পারে। কত রকমের মাটির জিনিস ঠেলাগাড়িতে ভরা। মাটির ব্যাংক, হাঁড়ি, ঢাকনা, থালা, গ্লাস, কাপ, জগ, ঝাজরসহ আরো কত কী।
এখন গ্রামে-গঞ্জেও সেসবের সাক্ষাৎ মেলা ভার। গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রায় যোগ হয়েছে নানান উপাদানে তৈরি গৃহসামগ্রী। প্লাস্টিক, সিলভার, স্টানলেস স্টিল, চীনামাটি, মেলামাইনের বাসনকোসন বাসায় ভরা। এখন পল্লী গ্রামের পরিবারগুলোতেও মাটির তৈজষপত্র প্রায় অনুপস্থিত।
কৃত্রিমতায় ভরা শহুরে জীবনে মানুষ কখনো কখনো পেতে চায় প্রকৃতির সান্নিধ্য। তাই মাটির টানে ফিরে যেতে চাই গ্রামবাংলার ফেলে আসা দিনগুলোয়। পথ চলতে যখন চোখে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া অতীত জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা কোনো উপকরণ, তখন মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও উদাস হয়ে যায়। তেমনই মাটির তৈরি বাসনকোসন মানুষকে টানে অতীতের স্মৃতির পাতায়।
মোহাম্মদ আলী মাটির তৈরি তৈজষপত্রের ব্যবসা করেন। তার ব্যবসার ধারাটাই আলাদা। মাটির মালামাল কেনেন এক মালিকের কাছ থেকে। সেই মালিকের অধীনে ২০-২৫টি ঠেলাগাড়ি। আছে তার ঝুপড়ি ঘরে টিনের ছাউনি দেয়া নিজস্ব মেস। এই মেসে ফেরিওয়ালারূপী ঠেলাওয়ালারা রাত যাপন করেন গাদাগাদি করে। এখানে থাকা-খাওয়ার খরচ মালিকের। মালিকই প্রতিটি মাটির পণ্যের পাইকারী ব্যবসায়ী। প্রতিটি পণ্যের পাইকারি দাম ধরে ঠেলাগাড়িসহ চালকদের দেন। শহরময় তারা ছড়িয়ে যান এলাকা ভাগ করে। খুচরা বিক্রি করেন। দিন শেষে পণ্যের মালিককে বেচাকেনার হিসাব বুঝিয়ে দেন প্রতিজন ঠেলাওয়ালা হকার। এতে তাদের প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ থাকে।
মোহাম্মদ আলীর বয়স ষাটের কাছাকাছি। বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভরদুপুরে সূচনা গেটে দাঁড়িয়ে আছেন ঠেলাভর্তি মাটির জিনিস নিয়ে। সারা দিন বেচাকেনা করে ফিরে যান মেসে।
মোহাম্মদ আলীর তিন মেয়েসহ এক ছেলে। পারিবারিক সূত্রে যতটুকু জায়গাজমি আছে, তাতে পরিবারের খরচ মোটামুটি চলে যায়। কিছু বাড়তি উপার্জনের আশায় বিনা পুঁজিতে তার এই ব্যবসা। থাকাখাওয়া ও বসবাসের সুযোগসুবিধা থাকায় নির্বিঘ্ন মনে করেন তিনিসহ সঙ্গীয় অন্য কর্মীরা। বাস্তবতার জীবনস্রোতে এভাবেই কেটে যায় জীবন।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL