আকাশে হরেক রকমের আতশবাজি ফোটানো, গানের তালে মগ্ন হয়ে কোমর দোলানো নাচ আর রাস্তায় রাস্তায় নগ্নতার শেষ পর্যায়ে গিয়ে যদি কোনো দিবস উদযাপন কিংবা কোনো নতুন বছর বরন করার দৃশ্য চোখে পড়ে তাহলে ধরে নিতে হবে নিশ্চয়ই এটি ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ খ্যাত নতুন বর্ষবরণ। নতুন বছরকে বরণ করতেই যেন এমন বেহায়াপনার আমেজে মেতে উঠে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী আর অতি উৎসাহী একটি সম্প্রদায়।
ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতকে থার্টিফার্স্ট নাইট বলা হয়। বর্ষবরণের নামে এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের যে কত আয়োজন তার কোনো শেষ নেই। আর সেই সঙ্গে আমাদের দেশেও চলে এর অপচর্চা। কেন এই থার্টিফার্স্ট নাইট আমাদের উদযাপন করতে হবে এমন প্রশ্নে একদল হয়তো এসে উত্তর দিবে যে, নতুন বছর, উদযাপনের একটা রীতি আছে না।
কথা হলো এই রীতি কোথায় থেকে এলো আর তা মানা কিংবা পালন করা কি বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের কাছে শোভা পায়?
ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। যদিও এই পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার খ্রিষ্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরির নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার হয়েছিল, সে অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হতো। কিন্তু ইরানে এই নববর্ষ বা নওরোজ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষুবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিশর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর।
মূলত প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীকালে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো। ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। আর বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে ২০০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। যার ধারাবাহিকতায় ৩১ ডিসেম্বর নতুন বছর পালনের রেওয়াজ হয়ে আছে দেশ জুড়ে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজ দেশের অধিকাংশই সভ্য সমাজের মানুষরাও এই অসভ্যের আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি, পটকাবাজি, গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানী, যেনা- ব্যভিচারসহ কত কিছুই না হচ্ছে এ রাতে। এ সব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ বাংলাদেশ; যার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম।
আজ আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটে অসামাজিক কার্যকলাপ বহুগুণে বেড়ে গেছে। নেশাদ্রব্য, আপত্তিকর নাচ-গানসহ বিভিন্ন বেহায়াপনাপূর্ণ কীর্তিকলাপ দ্বারা থার্টি ফার্স্ট উদযাপন গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে চলে আসছে পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে। বলাবাহুল্য, পাপাচার ও অনৈতিকতার মধ্য দিয়ে যে বছরের সূচনা তা জাতির জীবনে কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা খুব সহজেই অনুমেয় বিষয়।
সুস্থ মস্তিষ্কে একটু চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, এই নোংরা কালচারটি আমদানি করেছে এদেশেরই কিছু বুদ্ধিজীবী খ্যাত সচেতনমহল। এরা একটি শালীন সমাজের বুনিয়াদ গড়ার পরিবর্তে অশ্লীলতার ভাগাড় সৃষ্টি করতেই উৎসাহী হয়ে আছে। এরা একদিকে পহেলা বৈশাখের মাহাত্ম্য প্রচার করেন, অন্যদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের উসকানি দিয়ে থাকেন।
কিন্তু আমাদের এইট্কু বোধশক্তি কি নেই যে, একজন সাধারণ রুচিশীল মানুষও থার্টি ফার্স্ট নাইটের এই নোংরামি সমর্থন করতে পারে না। সুতরাং এই ধরনের পাপাচার বন্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর একটি মুসলিম প্রধান দেশের অভিভাবক হিসেবে দেশের সরকারের কর্তব্য এই ধরনের চরিত্রবিধ্বংসী উৎসব পালন যেন নিষিদ্ধ করা হয়।
লেখক : শিক্ষার্থী ও নিবন্ধকার
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL