২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
কলাম

পার্বত্য সীমান্তে সড়ক নির্মাণ

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১২-০৬ ১৭:০৮:২৫
...

দেশের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই তিন জেলায় পর্যাপ্ত উন্নয়ন হচ্ছে না- এমন অভিযোগ কোনো কোনো আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীর। এ কারণে কয়েকটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি গুটি কয়েক গোপন সংগঠন আরো সংঘবদ্ধ হয়ে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাকে উসকে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার দাবিতে অতি গোপনে সশস্ত্র আন্দোলনে লিপ্ত রয়েছে।

কুকি চিন বা কেএনএফের সক্রিয়তা বেশি। এই সংগঠনটি গোপন আস্তানা করে সাধারণ জনগণকে অপহরণ করে মুক্তি পণ আদায় করে। কাউকে কাউকে হত্যাও করে। মানুষ প্রাণভয়ে তাদের চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। এর একমাত্র কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা।

 যোগাযোগ অব্যবস্থার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছাতে পারে না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অপরাধ করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। ফলে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় দেশবিরোধী শত্রুরা।

এর আগে পাহাড়ি জেলাগুলোয় শান্তির জন্য কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে,  কোনো কোনো সংগঠনের সঙ্গে শান্তি চুক্তিও হয়েছে।

একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় নিবন্ধের তথ্য মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ৭২টি ধারা ছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু সেটা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি। এবং ভূমি বিরোধের টেকসই সমাধান আজও হয়নি ।

এই নিবন্ধে আরেক অংশে বলা হয়, ২০০১ সালে ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন করা হয়েছে। তবে আইনটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিতর্ক নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধনও করা হয়। সংশোধনের পর প্রায় সাত বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বিধিমালা চূড়ান্ত করা যায়নি। এই কারণে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির বিচারিক কাজ শুরু করতে পারেনি ভূমি কমিশন।

 এই সব কারণে চুক্তিনামার শর্তগুলোর সব ধারার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি এখনো জোরালো রয়েছে। এখন পর্যন্ত পার্বত্যবাসীর কোনো কোনো সংগঠন শান্তি প্রস্তাবের ধারাগুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দাবি করছে।

 তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে দুর্গম এলাকা। পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গলে ঘেরা। সেসব প্রত্যন্ত এলাকায় জনসাধারণ অবাধে যাতায়াত করতে পারে না। কার্যত এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় সফল উন্নয়নের কর্মকাণ্ড চালানো যায় না।

সরকার সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে। পাহাড়, বন-জঙ্গল কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হলে যাবতীয় উন্নয়ন হাতের মুঠোয় আসবে।

উন্নয়নের প্রধান শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে কোনো নির্মাণসামগ্রী পরিবহন করা সম্ভব নয়; আর এ কারণে থমকে যায় অবকাঠামো নির্মাণ। সরকার পার্বত্য এলাকায় তিন পাহাড়ি জেলার সীমান্তে পাহাড় কেটে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ করেছে। আগামী জুনে ৩১৭ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হবে। এই সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অবৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, নারী পাচার, মাদক চোরাচালান বন্ধ করা সহজ হবে।

 এ আঞ্চলিক সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ব্যাপক উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্যটনশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। কর্মহীন মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। এতে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে। তখন আর তাদের বঞ্চিত হওয়ার গ্লানি বহন করে বেড়াতে হবে না।

 স্বাধীনতার ৫২ বছর কেটে গেছে। শান্তি চুক্তি হওয়ার পর পার হয়ে গেছে ২৬ বছর। এর মধ্যে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলটির পর্যাপ্ত উন্নয়ন করা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ থেকে গেছে এলাকার কিছু মানুষের চোখে। এই কারণে এলাকার ওই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমা থেকেছে কয়েক যুগ ধরে। ভিন্নধারার চিন্তার অধিকারী নেতৃস্থানীয়রা দাবি আদায়ের অনেক সময় স্বোচ্চার হয়েছে।  এদের মধ্যে কিছু লোক সংঘবদ্ধ হয়ে গোপনে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। আর সরকার এ বিষয়টি অনুধাবন করে বিক্ষুব্ধ মানুষের জন্য যাবতীয় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

দুর্গম এলাকায় বন-জঙ্গল-পাহাড় কেটে হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা সহজ কথা নয়। এজন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন অর্থের, অন্যদিকে তেমন প্রয়োজন সাহসের। এই দুটি বিষয়কে সমন্বিত করা হলে তবে সম্ভব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। সরকার এই কঠিন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মহান স্বাধীনতার ৫২ বছরে কত সরকার এসেছে, আবার চলে গেছে। তাদের পক্ষে এই ধরনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের কথা আগে কখনো চিন্তা করা হয়নি।

 তবে এটা ঠিক, গত ১৫-২০ বছরে আমাদের রাজস্ব আয় অনেক গুণ বেড়েছে, বেড়েছে প্রবাসী আয়, সেই সঙ্গে বেড়েছে রফতানি আয়। যার ফলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রে পূর্ণতা পেয়েছে। যার কারণে দাতাদের সহযোগিতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যয়বহুল আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণের বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ভারত থেকে আমাদের দেশ হয়ে মিয়ানমার। মিয়ানমার পেরিয়ে থাইল্যান্ড দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমাদের সীমান্ত সড়ক তারই অংশ হতে পারে। এ কারণে আমাদের সীমান্ত সড়কে এর প্রভাব অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ সফল হোক, ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কার্যকর করা হোক, দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ এর সুফল ভোগ করুক, সমতার ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠুক, সব মিলে সুসম উন্নয়নের ধারায় দেশ এগিয়ে যাক - এই প্রত্যাশা সবশ্রেণীর গণমানুষের।

 লেখক: সাংবাদিক