২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
কলাম

ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা রুখতে হবে

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১১-২১ ১৭:০৮:৫৮
...

যানজট নিরসনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। কিন্তু এসব ফ্লাইওভার চালুর পর থেকে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানি। রোজ কেড়ে নিচ্ছে কারও না কারও প্রাণ। কেউ বাবা, কেউা ভাই আবার কেউ স্বজন হারাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর ওপর দিয়ে অধিক গতির ভারী যানবাহন ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের বেপরোয়া চলাচল অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, প্রতিটা ফ্লাইওভারে ডিভাইডার দেয়া জরুরি। এছাড়া স্পিড ব্রেকার না থাকলেও ফিউশন ব্রেকার (সীমিত গতিরোধক) দেয়া উচিত। তা না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

একটি আধুনিক ও নিরাপদ ফ্লাইওভারের জন্য দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোয় পরিকল্পিত কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই বলে মতামত দেন চট্টগ্রামের সচেতন মহল।

এছাড়া নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে পর্যাপ্ত ডিভাইডার ও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। নেই ট্রাফিক সাইন। ফলে ফ্লাইওভারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কোনো দিক-নির্দেশনা না থাকায় এর ওপর দিয়ে যানবাহনগুলোও চলছে বেপরোয়াভাবে। অধিকাংশ সময়ই এসব ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালান চালকরা। যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম থাকায় ওভারটেকিংয়ের প্রবণতাও বেশি। যার কারণে দুর্ঘটনার হারও প্রতিদিন বাড়ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে এসব ফ্লাইওভারে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়েছে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। চট্টগ্রামের যে কয়টা ফ্লাইওভার আছে, তার মাধ্যে সব থেকে দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। এই ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনার মূল কারণ ভারী যানবাহন, ট্রাক, লরিসহ বালি-পাথর বোঝাই ট্রলিগুলো প্রায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে। এসব গাড়ির উচ্চ গতি থাকায় এবং ফ্লাইওভারে রাতে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে খুব সহজেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার চালুর প্রায় তিন বছর পর সিডিএ ফ্লাইওভারটিতে ৩০০ মিটারের র‌্যাম্প নির্মাণ করে। তবে মূল ডিজাইনের বাইরে র‌্যাম্প নির্মাণ করায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সঙ্গে র‌্যাম্পটি কৌণিকভাবে সংযুক্ত হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে সড়কের যে কোনো সংযুক্তি অর্ধবৃত্তাকার হওয়ার কথা থাকলেও কৌণিক অবস্থানের কারণে ফ্লাইওভারটিতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া কদমতলী ফ্লাইওভারটিও যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। ফ্লাইওভারের রাস্তায় ছোটবড় গর্ত সৃষ্টি এবং যানবাহনের অস্বাভাবিক গতির কারণে এখানে প্রতি মাসে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয় পথচারীরা। সেইসঙ্গে নিত্য যানজটও লেগে থাকছে সেখানে।
গাড়ি চালকরা বলছেন, ফ্লাইওভারের উপর থেকে নামার সময় হঠাৎ সামনে গাড়ি এসে পড়ে। আবার সড়ক থেকে ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে প্রথমে বোঝা যায় না ওপর থেকে কোনো গাড়ি আসছে কি-না। কিছুদূর ওঠার পর দেখা যায় দ্রæতগতিতে আসছে কোনো বাস বা ট্রাক। শুধু উচ্চগতি নয়, এসব ফ্লাইওভারে নির্দিষ্ট লেইনে না গিয়ে উল্টো লেইন ধরে গাড়ি চালান চালকরা। যার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। তাই উঠানামার পথে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য সেখানে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশও।
তবে এত সব অনিয়মের মধ্যে সচেতনতা একটি জরুরি বিষয়। ফ্লাইওভারে একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য অসচেতনতাকেও দায়ী করা যেতে পারে। কারণ জীবন রক্ষার জন্য সর্বপ্রথম নিজেকেই সচেতন হতে হবে।
কিন্তু আমরা যদি অসচেতন হয়ে উচ্চগতি নিয়ে গাড়ি চালাই, তাহলে ট্রাফিকের অবহেলা কিংবা ফ্লাইওভারে আলোকস্বল্পতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ তো পাবো না। আমরা অনেকেই মনে করি ফ্লাইওভার মানে দ্রæতগতির রাস্তা। কিন্তু এই ভুল ভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে বিকল্প রাস্তা হিসেবে। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি এবং যানবাহনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে পরিমান রাস্তা না থাকায় এবং রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি না হওয়ার জন্য ফ্লাইওভার তৈরি। কিন্তু আপনি ফ্লাইওভারকে উচ্চগতির রাস্তা মনে করে যেমন খুশি তেমনভাবে গাড়ি চালাবেন সেটা তো কখনও কাম্য হতে পারে না। তাই আগে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে আগে সচেতন করি। এরপর যে সমস্যাগুলো থাকবে সেটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করি। তবেই আমরা আমাদের সোনার বাংলা গড়তে পারব। তাই আর নয় সড়কদুর্ঘটনা। ফ্লাইওভারে গতি নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ি চালান। এবং অন্যকেও সেই পরামর্শ দিন। সেইসাথে প্রশাসনের উচিত চট্টগ্রামের প্রতিটি ফ্লাইওভারে ট্রাফিক পুলিশের বক্স করে দেওয়া। এবং ফ্লাইওভারগুলোতে নজরদারি বাড়ানো। তবেই বন্ধ হবে এই মৃত্যুর মিছিল।