২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
কলাম

বৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা

রেজাউল করিম খোকন
প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২৮ ২০:০৩:৫১
...

ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। কিন্তু বাংলাদেশে দূতাবাস না থাকায় ভারতে গিয়ে ভিসার আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ঢাকায় দূতাবাস বা কনস্যুলার সেবা চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে জাপান ও কোরিয়া। এ দুটি দেশে ভালো আয়ের সুযোগ বেশি। কোরিয়ায় চাহিদা বাড়ছে প্রতি বছর। দেশটিতে মূলত কর্মী পাঠানো হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। চাহিদা থাকলেও ছাড়পত্র না পাওয়ায় কর্মী পাঠাতে পারছে না বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সি। অথচ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে নিয়মিত কর্মী যাচ্ছে কোরিয়ায়। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি। যদিও এর মধ্যে অধিকাংশই গেছেন অনিয়মিত উপায়ে। এখনো অনেকে যাচ্ছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে। দুর্ঘটনায় মারাও যাচ্ছেন নিয়মিত। তবে গত দুই বছর দেশটিতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো বেড়েছে। এতে গত পাঁচ বছরে বেশি কর্মী পাঠানো দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে উঠে এসেছে ইতালির নাম। এ সময় ২৫ হাজারের বেশি কর্মী গেছে দেশটিতে। ৫৩টি দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছে ২০১৮ সালে। যদিও অনেক বছর ধরে নতুন কোনো শ্রমবাজার তৈরি করতে পারছে না সরকার। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় কনস্যুলার সেবা চালু করেছিল রোমানিয়া। প্রভাবশালী মহলের নিজস্ব লোকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিসা করার চাপে এক মাসের মাথায় এটি বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অথচ ৬ মাসে ১৫ হাজার কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ১৬৮ দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি যৌক্তিক নয়। শ্রমবাজার মূলত ১০-১১টি দেশে সীমিত। কোনো কোনো বছরে এক দেশের ওপর বড় নির্ভরতা দেখা যায়। সীমিত দেশের ওপর নির্ভরতায় বড় ঝুঁকি রয়েছে। কেননা এসব দেশেরও নানা সীমাবদ্ধতা আছে। নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে না পারলে কর্মী পাঠানো কমে যেতে পারে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও কাজে রয়েছে সমন্বয়হীনতা।

বাংলাদেশের দেড় কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ইতালি ও শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ যুক্তরাজ্যে আছেন। বাকিদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী ভারতের অনেক বেশি অভিবাসী কর্মী বৈধভাবে ইউরোপে কাজ করছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে অনেক অভিবাসী ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে যাওয়ার সময় অনেকে ভয়াবহ বিপদে পড়েন, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে, অনেকে ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারলেও পরবর্তী সময়ে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অথচ বৈধ পথে ইউরোপে কাজের সুযোগ থাকলেও আমরা অনেকেই সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না। আমরা জানি না, কীভাবে এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের আওতায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ বৈধ পথে জনশক্তি পাঠাচ্ছে, যা সংখ্যার দিক থেকে নগণ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালি ও গ্রিসের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রোমানিয়া, কসোভো ও বসনিয়ার সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও অনেক ক্ষেত্রে এর নানা শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পারছে না। আইনি কাঠামো ও প্রতারণার সুযোগ বিবেচনায় বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সমঝোতা স্মারকের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। দেখা গেছে, অনেক অভিবাসী দালালের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বৈধ পথে রোমানিয়া বা পোল্যান্ডে যেতে দালালেরা তাদের কাছ থেকে সরকারের নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এসব অভিবাসীর অনেকে আবার এসব দেশ থেকে জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে চলে যাচ্ছেন। এতে করে ইউরোপে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

সারা বিশ্বে এখন দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে ইইউর পাশাপাশি কানাডা, জাপান, কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে। ফলে ইউরোপকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লোক নিতে হচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন ইউরোপের বাজার দখল করতে পারছি না, এখন সেটাই প্রশ্ন। নিশ্চয়ই তার কিছু কারণ আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বৈধভাবে বাংলাদেশ কেন ইউরোপের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাচ্ছে? সরকারি-বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দেশে ও বিদেশে যেসব গবেষণা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ফলে ইউরোপে বিভিন্ন খাতে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ঠিক কতখানি এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে কি না, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। উদাহরণস্বরূপ, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমরাস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই খাতে শ্রমিকদের চাহিদাও বেড়েছে। তবে এই খাতে কোন ধরনের শ্রমশক্তি দরকার, সে সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। বাংলাদেশে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ইউরোপের স্কুল পর্যায়ে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ফরাসি, জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ এসব ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সমন্বিত পাঠ্যক্রমের আওতায় শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ অপ্রতুল। অনেক ক্ষেত্রে তা ইউরোপের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা সনদ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সনদের সমতুল্য নয়। আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রম সাধারণত স্থানীয় শ্রমবাজার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কথা মাথায় রেখে প্রণয়ন করা হয়। ইউরোপের বাজারের তুলনায় এই পাঠ্যক্রম সামঞ্জস্যহীন। উদাহরণস্বরূপ জার্মানিতে অভিবাসীদের জন্য কঠোর নিয়মকানুন থাকলেও জার্মান সরকার ইইউর বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের দক্ষতা যাচাইয়ে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আমরা আমাদের পাঠক্রমকে ওই পর্যায়ে আনতে পারিনি। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষা খাত বেশ অবহেলিত। আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট আছে। কারিগরি শিক্ষকদের অনেকেরই আবার পর্যাপ্ত আধুনিক প্রশিক্ষণ নেই। ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী পরীক্ষাগার রয়েছে হাতে গোনা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের অভিভাবকেরা সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাদানে বেশি আগ্রহী। কারিগরি শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ কম। এই অনাগ্রহের মূল কারণ হতে পারে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রিকে যতটা জনপ্রিয় ও সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়, কারিগরি শিক্ষাকে ততটা সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয় না। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়, এই তথ্য অনেক অভিভাবক জানেন না। এই তথ্যের অভাব দূর করতে বা কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় করতে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। প্রথমত, ইউরোপের শ্রমবাজার সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক ও তাঁদের দক্ষতা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের পরিসংখ্যান তৈরি করে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিদেশে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কীভাবে চাকরি খুঁজতে হয়, সে সম্পর্কে জানাতে হবে। আমাদের নিজস্ব জব পোর্টাল তৈরি করতে হবে। কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জব পোর্টালে প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে চাকরিদাতাদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর নিয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন আমাদের এই জব পোর্টালে প্রবেশাধিকার পায়, সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর যারা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান, তারা অদক্ষ অবস্থায় বিদেশে গেলেও দক্ষ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাই এসব দেশে লোক পাঠানোর সময় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। পড়াশোনা বা কাজের বিনিময়ে দক্ষতা অর্জন করলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সনদ দেওয়ার প্রচলন আছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির সময় এই শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যে অভিবাসীরা যেন কাজ শেষে সনদ পান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম অনেকটাই ইউরোপীয় আদলে তৈরি। চাইলেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব। দেশে ফেরত আসার পর অভিবাসীদের জব প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে ইউরোপের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। তৃতীয়ত, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসংকট বা সরঞ্জামের ঘাটতি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের ইতালি, জার্মানি ও অন্যান্য দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের কয়েকটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মডেল হিসেবে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করতে পারি। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বল্প পরিসরে ইউরোপীয় শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব। চতুর্থত, দেশের অনেক তৈরি পোশাকশিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নিজেদের কর্মী ইউরোপে পাঠাচ্ছে। বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝে তাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইউরোপের শ্রমবাজারে নিজেদের প্রচার বাড়াতে হবে। পঞ্চমত, দেশে-বিদেশে আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকে মাথায় রেখে পাঠক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমাদের সনদ যেন বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা না হারায়, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের যে ভুল ধারণা আছে, তা দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের বোঝাতে হবে, বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। এমনকি বিদেশে দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।/// দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং, অভিভাবকদের মনোজাগতিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে সরকারিভাবে প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষার্থীদের ধ্যানধারণার পরিবর্তনেও আমাদের কাজ করতে হবে। তাঁদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে হবে। কৃষি, কলকারখানা, উৎপাদন ও শিল্পক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে সুযোগ-সুবিধা সীমিত হয়ে যাবে। তাতে দেশের পণ্য রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থায়ও সংস্কার লাগবে। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। তবে পণ্য বৈচিত্র্যকরণে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। নতুন সময়ের প্রক্ষাপটে আমাদের জনশক্তি রপ্তানির নতুন নতুন গন্তব্য খোঁজার বিষয়টিতে আরও মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ, বিদেশে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করে সেখানে জনশক্তি রপ্তানি শুরু এবং পুরনো বাজারগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ করে রপ্তানি গন্তব্যের বহুমুখীকরণের ব্যাপারটি গতি পাবে বলে মনে করি। জনশক্তি রপ্তানি খাতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। জনশক্তি রপ্তানির বাজারটিকে সীমাবদ্ধ রাখলে আগামি দিনগুলোতে নতুন নতুন সমস্যা সংকট হানা দেবে। এখন থেকেই জনশক্তি রপ্তানির নতুন নতুন গন্তব্য খোঁজার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব দেশে রপ্তানি ক্ষেত্রে নানা কাঠামো ও নিয়ম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে , সেসব দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দরকষাকষি করতে হবে। আমাদের কোনো ভাবেই পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার ও কলাম লেখক

/মামুন